গণবিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলংকায় ‘আইনশৃঙখলা ভঙ্গকারীদের’ দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি করা হয়েছেন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক দূরবস্থার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করে দুই ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাভায়া ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবি করে আসছিল বিক্ষোভকারীরা।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি মন্ত্রীদের পদত্যাগ, কথিত জাতীয় সরকার গঠন, বিরোধীদলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপেও পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে উল্টো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকায় অবশেষে গতকাল রাতে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
কিন্তু এতেও শান্ত হয়নি শ্রীলংকার রাজপথ। শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, প্রেসিডেন্টেরও পদত্যাগের দাবিতে এখনও অনড় রয়েছে আন্দোলনকারীরা।
উল্লেখ্য, রাজাপাকসে পরিবারের অর্ধডজন সদস্য এতদিন প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ শ্রীলংকার বিভিন্ন শীর্ষপদে আসীন ছিলেন। অন্যান্যদের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ মাহিন্দা রাজাপাকসেও সরে দাড়ানোয় সংখ্যাটি এখন নেমে এসেছে একে। কেবল প্রেসিডেন্ট গোতাভায়া রাজাপাকসেই পরিবারের একমাত্র সদস্য হিসেবে এখনও টিকে আছেন কলম্বোর ক্ষমতার অলিন্দে।
মঙ্গলবারের নির্দেশনায় কোন ব্যক্তি জনগণের সম্পদ লুট করলে বা কারো জীবনের প্রতি হুমকি হিসেবে গণ্য হলে তাকে গুলি করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যকে কলম্বোর রাস্তায় রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
কলম্বোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সোমবার থেকে সহিংস রূপ ধারণ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত শহরটিতে ৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া অন্তত ২০০ নাগরিক আহত হয়ে কলম্বোর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই পুলিশের হাতে আক্রান্ত হলেও একটা অংশ সরকারপন্থী কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন। আহতদের আইনজীবিরা জানিয়েছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন।
গতকাল রাতভর সহিংস বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে কলম্বো। রাজধানীর সড়কে সড়কে তার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোথাও জানালার কাচ ভাঙা বাস পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে, কোথাও দাউ দাউ করে জ্বলছে গাড়ির টায়ার, কোথাও আবার আস্ত বাসই ডুবে আছে লেকে, যেগুলো বিক্ষুব্ধ জনতা ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ফেলেছে সেখানে।
সারারাত ধরে চলা তান্ডবে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার অর্ধশতাধিক বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাভায়ার কার্যালয়ের বাইরে এখনও অবস্থান নিয়ে আছে। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার জন্য ক্রমাগত আহবান জানিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনকারীরা।
টানা হিংসাত্মক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে শ্রীলংকা জুড়ে জারি করা কারফিউয়ের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে শ্রীলংকার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ত্রিনকোমালি নৌঘাটির সামনেও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গণবিক্ষোভের মুখে কলম্বোর বাসভবন ছেড়ে সপরিবারে এই নৌঘাটিতেই এসে আশ্রয় নিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।