আগামী ৯ মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়ের বার্ষিকীর দিনটিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান ‘বিশেষ সামরিক অভিযানকে’ পুরোদস্তুর যুদ্ধে উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ইউক্রেনে রাশিয়ার কথিত অভিযান। যুদ্ধের সব উপাদান বিদ্যমান থাকলেও মস্কোর পক্ষ থেকে এটিকে যুদ্ধের পরিবর্তে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে অভীহিত করা হয়।
দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ‘অভিযানে’ এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশিত সাফল্যের দেখা পায়নি রুশ সামরিক বাহিনী। রাজধানী কিয়েভের পতন কিংবা ইউক্রেনের সিংহভাগ ভূখন্ড দখল, কোন লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি মস্কো। উল্টো ইউক্রেনের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে শুরুতে দখল করে নেওয়া অনেক এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে তাদের। পূর্ব ইউক্রেনের রুশ সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল ছাড়া পুরো দেশটিই এখনও কার্যত ইউক্রেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
জানা গেছে, যুদ্ধের কর্তৃত্ব ফিরে পেতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নিজেদের সামরিক সক্ষমতার সর্বোচ্চটা প্রয়োগ করার চিন্তা করছে ক্রেমলিন। কিন্তু ‘সামরিক অভিযানের’ ক্ষেত্রে আইনগতভাবে সেটা পুরোপুরি করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র যুদ্ধের বেলাতেই সর্বশক্তি নিয়োগ করা যায়।
এই কারণেই বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান ‘বিশেষ সামরিক অভিযানকে’ এবার ‘যুদ্ধের’ মর্যাদা দিতে চলেছে মস্কো। আর সেই ঘোষণা দেওয়ার জন্য আসন্ন ঐতিহাসিক ৯ মে দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তি বিজয়ী হয়েছিল ১৯৪৫ সালের এই দিনটিতে। যদিও ঘড়ির কাটার পার্থক্যের কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে ৮ মে ও রাশিয়ায় ৯ মে পালিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের এই বার্ষিকী।
প্রতিবছর ৯ মে মস্কোর রেড স্কয়ারে বর্ণাঢ্য সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজন করে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ উচ্চপদস্থ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দেশটির সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা প্রদর্শন করা হয় এই কুচকাওয়াজে।
ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এবছরের কুচকাওয়াজ ঘিরে বাড়তি আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছিল আগেই। আর এবার জানা যাচ্ছিল, ঐ কুচকাওয়াজে দেওয়া ভাষণেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন, যা এতদিন ছিল ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’।
এই জল্পনা এবং তা নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্তরে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনা চললেও এতদিন এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি মস্কো। তবে আজ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্টভাবে বলেছেন, ৯ মে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার যে কথা বলা হচ্ছে, তা নেহাতই গুজব। ঐদিন এরকম কোনো ঘোষণা প্রেসিডেন্ট পুতিন দেবেননা।
পুতিনের আস্থাভাজন মুখপাত্র পেসকভের এই বক্তব্যকে অবশ্য একবাক্যে বিশ্বাস করতে নারাজ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। কারণ কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনে হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও রাশিয়া বলেছিল, ইউক্রেনে হামলার জন্য নয়, বরং নিয়মিত সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে দেশটির সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা ও বিপুল যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে। বাস্তবে কতটা সত্য ছিল তাদের সে দাবি, তা পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে গোটা বিশ্ব দেখেছে।