মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ‘বিপদের সাথে খেলছে’। একইসাথে বিরল এক ঘোষণায় বাইডেন আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে তবে দেশটিকে রক্ষায় সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
চতুর্দেশীয় জোট কোয়াডের শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিতে এই মুহূর্তে জাপানে রয়েছেন জো বাইডেন। সেখানেই এই অপ্রত্যাশিত ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাইওয়ানের ‘স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব’ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের কথা অতীতে বাইডেন এবং অন্যান্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মুখে বারবার শোনা গেছে।
তবে চীন বাস্তবিকই কোনোদিন তাইওয়ানে হামলা চালিয়ে বসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কি হবে তা নিয়ে কখনোই কোনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি কোনো মার্কিন প্রশাসনই।
আর সম্প্রতি ইউক্রেনে রুশ হামলা এবং তাতে সরাসরি না জড়ানোর মার্কিন সিদ্ধান্তের কারণে কূটনৈতিক মহল একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল, ভবিষ্যৎে তাইওয়ানও কখনো হামলার শিকার হলে যুক্তরাষ্ট্র সেখানেও প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করবেনা। বড়জোর ইউক্রেনের মত তাইওয়ানকেও বড় আকারে অস্ত্রসাহায্য করবে এবং রাশিয়ার মত চীনের বিরুদ্ধেও একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে।
বাইডেনের এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের তাইওয়ান নীতির পরিবর্তন কিনা, এমন প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি তা মনে করেননা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনা হামলা থেকে তাইওয়ানকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেউ ভুল করলেও একই ভুল দু’বার করেনা। সুতরাং তাইওয়ানকে রক্ষার অঙ্গীকার বাইডেন যখন কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার করলেন, তখন ধরে নিতেই হবে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আসলেই বদলে গেছে। ইউক্রেন ইস্যুর মত পরোক্ষে নয়, বরং সরঞ্জামের সাথে সাথে সেনাও পাঠিয়ে সরাসরিই চীনের মোকাবেলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন বাহিনী।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এমন ঘোষণায় স্বভাবতই ক্ষুব্ধ চীন। দেশটি তাইওয়ানকে তাদের একটি বিদ্রোহী প্রদেশ হিসেবে দেখে। এই ইস্যুতে চীনের কড়া অবস্থানের কারণে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশই তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও না। তবে ‘তাইওয়ান রিলেশনস আক্ট’ নামের বিশেষ এক আইনের মাধ্যমে তাইওয়ানের কাছে নিয়মিত অস্ত্র বিক্রি করে মার্কিন প্রশাসন। এই আইনে বলা আছে, আত্মরক্ষার জন্য তাইওয়ানের যা প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্র তা সরবরাহ করবে।
তাইওয়ানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও ‘এক চীন’ নীতির কারণেই তাদের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এমনকি পশ্চিমা অন্য কোন দেশেরও। এই নীতির মূলকথা হল চীন, তাইওয়ান, হংকং সকলেই একই চীনের অংশ, তাদের শাসনব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হলেও। বহু যুগ ধরেই এই নীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসেছে প্রায় পুরো বিশ্ব।
ঐতিহাসিকভাবে তাইওয়ান একসময় চীনের অন্তর্গত থাকলেও ৪০’র দশকে গৃহযুদ্ধে তারা আলাদা হয়ে যায়। চীনের মূল ভূখন্ড থেকে বিছিন্ন এই দ্বীপটি তখনই স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে তাইওয়ানের এই ঘোষণাকে কখনই মেনে নেয়নি চীন। তারা এখনও একে নিজেদের অংশই মনে করে। চীনের অবস্থান হল, কোনো একদিন আবার তাইওয়ানকে বেইজিংয়ের শাসনের অধীনে নিয়ে আসা, তা বলপ্রয়োগ করে হলেও।
স্বাধীনতা ঘোষণার পরই তাইওয়ান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। দেশটি নির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। তাইওয়ানের নিজস্ব সংসদ ও সংবিধান রয়েছে। প্রায় ৩০০,০০০ নিয়মিত সদস্যের সামরিক বাহিনীও রয়েছে দেশটির।