ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক শিরিন তাদেরই এক সদস্যের গুলিতে নিহত হয়ে থাকতে পারেন বলে অবশেষে মেনে নিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার সিনিয়ির সাংবাদিক শিরিন গত মে মাসে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে সংবাদ সংগ্রহের সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেখানে থাকা ইসরায়েলি সেনাদের একটি দলের গুলিতেই প্রাণ হারান শিরিন।
নিজেদের কারও গুলিতে সাংবাদিক শিরিন আবু আলার মৃত্যুর দাবি শুরুতে অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ তদন্তের ঘোষণা দেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আজ সেই তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করে দেশটি। এতে বলা হয়, তদন্তে তাদের বাহিনীর কোনো সদস্যের দ্বারা শিরিন আবু আলার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ‘সম্ভাবনা’ খুঁজে পেয়েছেন তারা।
তবে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের প্রতিবেদনে এও দাবি করেছে যে, ঐ সেনা ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, বরং ভূলবশত শিরিনকে গুলিবিদ্ধ করে থাকতে পারেন।
ইসরায়েলের এমন দাবির অর্থ হল, গুলি চালানো অভিযুক্ত সেনার বিরুদ্ধে ‘অপরাধ’ এর অভিযোগ আনার কোনো সুযোগ আর থাকছেনা। সেক্ষেত্রে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচারের সম্ভাবনা কার্যত এখানেই শেষ হয়ে গেল।
শিরিন আবু আলার পরিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর আজকের প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেছে, তারা একেবারেই আশ্চর্য হননি। তারা জানতেন যে ইসরায়েল প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করবে এবং (শিরিনের) হত্যাকান্ডের দায় কোনো না কোনোভাবে ঝেড়ে ফেলবে।
৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আলা হত্যাকান্ডের দিন ১১ মে তারিখে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পশ্চিম তীরের জেনিনের শরনার্থী শিবিরে যান। এসময় তার সাথে আল জাজিরার সাংবাদিক দলের অন্য সদস্যরাও ছিলেন।
ঐ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানের খবর সংগ্রহ ছিল তাদের উদ্দেশ্য। অভিযানকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে সেখানে সেনাদের সাথে বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
ঘটনার সময় শিরিন ও তার সহকর্মীদের পরনে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট ছিল। জ্যাকেটে সংবাদকর্মীদের পরিচিতিমূলক ‘প্রেস’ কথাটিও লেখা ছিল।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎই গুলিবিদ্ধ হন শিরিন আবু আলা। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মারা যান শিরিন।
সহকর্মী এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তখন থেকেই দাবি করে আসছিল, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে সাংবাদিক শিরিনের। পরবর্তীতে জাতিসংঘ এবং কয়েকটি সংস্থার তদন্তেও এই দাবির সত্যতা মেলে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিবেদনেও একই আভাস দেওয়া হয়।
এনিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ঘটনার তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। এই তদন্তে অভিযুক্ত সেনারও বক্তব্য নেওয়া হয়।
ইসরায়েলের ভাষ্য অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর ঐ সদস্যের দাবি, ঘটনার সময় চারিদিক থেকে ফিলিস্তিনিদের ছোড়া গুলির হাত থেকে আত্মরক্ষা করতেই পাল্টা গুলি ছুড়েছিল তারা। এসময় অসাবধানতাবশত কাছেই দায়িত্ব পালন করতে থাকা শিরিন আবু আলার গায়ে গুলি লেগে থাকতে পারে।
তবে ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ফিলিস্তিনিদের দিক থেকে গুলিবর্ষণের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।