ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে এক ডজনেরও বেশি রাষ্ট্র ইউক্রেনে থাকা তাদের নাগরিকদের অবিলম্বে দেশটি থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশনা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানিসহ তালিকায় থাকা দেশগুলো বলছে, রাশিয়া বাস্তবিকই ইউক্রেনে হামলা চালালে দেশটিতে থাকা নিজেদের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যেকোন সামরিক আগ্রাসন শুরুর আগেই সময় থাকতে তাদেরকে ইউক্রেন ছেড়ে চলে আসার জন্য বলা হচ্ছে।
রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় লক্ষাধিক সেনার সমাবেশ ঘটিয়েছে। জড়ো করেছে ট্যাংক, মিসাইলসহ বিপুল সংখ্যক যুদ্ধ সরঞ্জাম। দেশটি যদিও বলছে নিজস্ব সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবেই তাদের এই এত আয়োজন, তবে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, সকলেই মোটামুটি নিশ্চিত যে পরিস্থিতির নাটকীয় অগ্রগতি না হলে প্রতিবেশী ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণ একপ্রকার অবশ্যম্ভাবী।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে যেকোনো আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুশিয়ার করে দিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদেমায়ার জেলেনস্কি রাশিয়ার সমালোচনার পাশাপাশি ‘যুদ্ধ নিয়ে ভীতি’ ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে।
হোয়াইট হাউজ সর্বশেষ এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা যেকোনো সময়ে আরম্ভ হতে পারে। এবং সম্ভবত তা শুরু হবে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণের মাধ্যমে। ক্রেমলিন এই সতর্কবাণীকে উড়িয়ে দিয়ে একে ‘উস্কানিমূলক কল্পনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মার্কিন দূতাবাস থেকে নিজেদের ‘অতিজরুরি নয়’ এমন কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার থেকে দূতাবাসের নিয়মিত কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয় মার্কিন সরকার। তবে যেকোন সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে কিছু দূতাবাস কর্মীকে নিয়োজিত রাখার কথা জানিয়েছে দেশটি।
একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছে কানাডাও। দেশটি তাদের দূতাবাস কর্মীদের কিয়েভ থেকে সরিয়ে লভিভে নিয়ে এসেছে। লভিভ শহরটি পোল্যান্ড সীমান্তের খুব কাছে।
তবে ইউক্রেনে নিযুক্ত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি এবং ব্রিটিশ দূতাবাসের কয়েকজন সদস্য রাজধানী কিয়েভেই অবস্থান করবেন।
এদিকে রাশিয়া বলেছে, তারা ইউক্রেনে তাদের দূতাবাসের কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ হিসেবে দেশটি বলেছে, ইউক্রেন সরকার বা তৃতীয় কোন রাষ্ট্রের দ্বারা উস্কানিমুলক আচরণের আশঙ্কা করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দেশটিতে আগে থেকেই অবস্থানরত প্রায় দেড় শতাধিক মার্কিন সেনাকেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বের করে আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের তাদের দূতাবাস সংক্রান্ত এসব পদক্ষেপের পরপরই এক এক করে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডে এবং জাপান তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। কয়েকটি দেশ তাদের দূতাবাসের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রাখলেও কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে সরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে চলমান সংকটের মধ্যে আজ টেলিফোনে কথা হয় জো বাইডেন ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে। মার্কিন প্রেসিডেন্টই তার রুশ সতীর্থকে ফোন করেছিলেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
ফোনালাপে বাইডেন এই বলে পুতিনকে আবারও সতর্ক করে দেন যে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেন দখল করে নেওয়ার চেষ্টা হলে তার ‘তাৎক্ষণিক এবং তীব্র’ জবাব দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও কূটনৈতিক পথে সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে অন্যান্য পন্থা অবলম্বনের জন্যও তারা সমানভাবে প্রস্তুত আছে।
অবশ্য বরাবরের মতই আগ্রাসন ঘটলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঠিক কি ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র নেবে তা স্পষ্ট করেননি বাইডেন। পশ্চিমা নেতারা এখন পর্যন্ত মস্কোর ওপর কেবল ‘কঠোর’ অর্থনৈতিক অবরোধ জারির হুমকি দিয়ে আসছেন।
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানূয়েল ম্যাক্রোও টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে। এ সপ্তাহেই ক্রেমলিনে মুখোমুখি বৈঠকের পর এটি দু’নেতার দ্বিতীয় আলাপ। ম্যাক্রো ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহবান জানিয়েছেন।