অবশেষে যাত্রা শুরু করল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নামের এই মাধ্যমটি অ্যাপ আকারে মার্কিন সংস্করণের অ্যাপেল স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।
নতুন এই অ্যাপটির সাথে প্রচলিত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের মিল দেখা যাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ মূলধারার প্রায় সবক’টি যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ রয়েছেন। বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে গত বছর মাধ্যমগুলো সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট অপসারণ করে দেয়।
ট্রাম্পের চালু করা নতুন মাধ্যমটির সীমিত সংস্করণ ছাড়া হয়েছে অ্যাপেলের অ্যাপ স্টোরে। জানা গেছে, শুরুর দিকে অ্যাপটিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে ব্যবহারকারীদের।
নতুন যোগাযোগ মাধ্যমের উদ্যোক্তা টিমের প্রধান ও সাবেক কংগ্রেসম্যান ডেভিন নুনেস জানিয়েছেন, অ্যাপটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ আগামী মার্চের শেষ নাগাদ চালু করা হবে। যেসব ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট খুলতে সমস্যা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে জানানো হয়েছে, অ্যাকাউন্ট খোলার বিপুল চাহিদার কারণেই অনেকের ক্ষেত্রে অ্যাপটিতে রেজিষ্টার করতে আপাতত সমস্যা হচ্ছে।
‘ট্রুথ সোশ্যাল’ অ্যাপটি তৈরি করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই মালিকানাধীন ‘ট্রাম্প মিডিয়া আন্ড টেকনোলজি গ্রুপ’ (টিএমটিজি)। বছর খানেক আগে যাত্রা শুরু করে এই মিডিয়া প্রতিষ্ঠানটি।
টুইটারের পোস্টকে যেমন ‘টুইট’ বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টের আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রুথ’। গত সপ্তাহে ট্রাম্পপুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তার বাবার করা প্রথম পোস্ট বা ‘ট্রুথের’ স্ক্রীনশট শেয়ার করেন। পোস্টটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট লিখেছিলেন, “প্রস্তুত হও। আপনাদের প্রিয় প্রেসিডেন্ট শীঘ্রই আপনাদের দেখা দেবেন।”
কোন অ্যাপ উন্মুক্ত হওয়ার পর সময়ে সময়ে সেটি আপডেট করা হয়। কখনো নতুন ফিচার সংযোজনের জন্য, কখনো কোন ত্রুটি সংশোধনের জন্য এটি করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ ক্রমিক নম্বর দিয়ে চিহ্নিত থাকে।
ট্রাম্পের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ বাজারে আসার কিছু সময়ের মধ্যেই কিছু ত্রুটি সংশোধনের জন্য এটিকে আপডেট করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাপেল অ্যাপ স্টোর। সেইমত অ্যাপটির বর্তমান সংস্করণটির নপম্বর হল ১.০.১।
২০২০ এর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের বিজয়ের পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারী মার্কিন সংসদে নজিরবিহীন হামলা চালায় পরাজিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা। বাইডেনের বিজয় যেন সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভসে অনুমোদন না পায় সেজন্যই হামলাটি চালিয়েছিল উগ্র ট্রাম্পপন্থীরা।
নজিরবিহীন সেই তান্ডবকে সমর্থন জানিয়ে সেদিন এর পক্ষে একের পর এক টুইট করেছিলেন সেসময় সদ্য ক্ষমতাহারা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই অবস্থানকে সংসদে সহিংসতায় উস্কানি হিসেবে বিবেচনা করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় একসময় তাকে নিষিদ্ধই ঘোষণা করে টুইটার। তার ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টও প্লাটফর্মটি থেকে অপসারণ করা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প। টুইটারকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যা দিয়ে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন নিজস্ব সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠার। দীর্ঘ প্রায় এক বছর এনিয়ে কাজ করার পর অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে পথচলা শুরু করল ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বপ্নের সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যাল’।
‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নিয়ে কতদূর যেতে পারবেন ট্রাম্প?
খুব আগ্রহ নিয়ে নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া খুললেও নিজের ইচ্ছামত এটি ব্যবহার করার অবারিত সুযোগ ডোনাল্ড ট্রাম্প পাবেননা। কারণ কি ধরনের পোস্ট করা যাবে আর কোনগুলো করা যাবেনা তার ব্যাপারে ফেসবুক, টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর যেমন নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে, তেমনি রয়েছে অ্যাপ স্টোর কিংবা গুগল প্লে-র মত অ্যাপ রাখার প্লাটফর্মগুলোরও।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ ব্যবহার করে নীতিবিরুদ্ধ কোন কনটেন্ট প্রচার করতে থাকেন, তাহলে এসব প্লাটফর্মও অধিকার রাখে ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়াকে অ্যাপ স্টোর থেকে সাময়িক বা পুরোপুরি সরিয়ে ফেলার।
সেরকমটা ঘটলে ট্রাম্পের সমর্থকরা আর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ ডাউনলোড কিংবা আপডেট করতে পারবেননা। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়বে ট্রাম্পের ‘বিতর্কিত মত প্রকাশের’ নিজস্ব রাস্তাটিও।