আগ্রাসন শুরুর এক সপ্তাহ পেরোনোর পর অবশেষে প্রথমবারের মত ইউক্রেনের উল্লেখযোগ্য কোন শহরের দখল নিতে সক্ষম হল রাশিয়া। দেশটির দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী খেরসন এখন রুশ সেনার অধীনে।
শহরটির দখল নিতে গত কয়েকদিনে খেরসনে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তবে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে শহরটিতে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয় রাশিয়াকে। শেষ পর্যন্ত আজ খেরসন শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অবস্থান নিতে সক্ষম হয় তারা।
খেরসনের মেয়র ইগর কলিখায়েভ আজ এক বার্তায় জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ভারী সামরিক যান নিয়ে সিটি কাউন্সিল কার্যালয় জোর করে দখলে নিয়েছে। শহর জুড়ে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
ইউক্রেন জুড়ে রুশ হামলা শুরুর পর দেশটিতে আজই ছিল সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দিন। একাধিক শহরে মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। নিজেদের অস্ত্রভান্ডার ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ভারী সমরাস্ত্র দিয়ে রুশ সেনাদের বিপক্ষে অনেক জায়গাতেই শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলছে ইউক্রেনের বাহিনী।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মত নিজেদের বাহিনীর বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা স্বীকার করেছে রাশিয়া। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, রুশ-ইউক্রেন সংঘাতে গত এক সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯৮ রুশ সেনা, আহত হয়েছেন ১,৫৯৭ জন। তবে ইউক্রেনের দাবি, নিহত রাশিয়ান সেনার সংখ্যা হাজারের ওপরে।
ইউক্রেনের তরফে সংঘাতে এখন পর্যন্ত তাদের দেশের ২,০০০ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেতে এপর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের।
এদিকে ইউক্রেনে চালানো রুশ হামলার প্রেক্ষিতে মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত’।
রুশ বাহিনীর হাতে খেরসনের পতনের পর এর মেয়র ইগর কলিখায়েভ এর ফেসবুক বার্তায় নিশ্চিত করেছেন শহরটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে রুশ সেনার হাতে চলে যাওয়ার বিষয়টি। খেরসনে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কোন সদস্য নেই বলে দাবি করে মেয়র কলিখায়েভ রাশিয়ার বাহিনীর প্রতি শহরটির বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি না চালানোর আহবান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত কৃষ্ণসাগর উপকূলের এই খেরাসন শহরে রয়েছে দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর। শহরটির জনসংখ্যা ২৮০,০০০ এর কিছু বেশি।
খেরসনের মেয়র কলিখায়েভ অনাকাঙখিত সংঘাত এড়াতে শহরটির বাসিন্দাদেরকে রুশ বাহিনীর বেধে দেওয়া কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এই নিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে :
– রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ মেনে চলা
– ঘরের বাইরে দু’জনের বেশি লোকের জড়ো না হওয়া
– কেবলমাত্র খাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি পণ্য নিয়ে আসা যানবাহনকে শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া
– গাড়ি চালানোর সময় গতিবেগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা
খেরসনের দখল নেওয়াটা রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরে বেলারুশ ও পূর্বে রাশিয়ার স্থল সীমান্ত ছাড়াও দক্ষিণের ক্রিমিয়া উপকূল দিয়ে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া। এবার বন্দর নগরী খেরসন হাতে আসায় সেখানে ঘাটি তৈরি করে দক্ষিণ দিক থেকে ইউক্রেনের আরও গভীরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবে রাশিয়া।
ইউক্রনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেই এই মূহুর্তে ভলছে তীব্র লড়াই। শহরটির মেয়র জানিয়েছেন রাশিয়ার ছোড়া গোলা ও মিসাইল আঘাত হানছে আবাসিক এলাকাগুলোতেও। এতে করে বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক সংখ্যায় হতাহতের ঘটনা ঘয়ছে।
দক্ষিণ ইউক্রেনের আরেক শহর মারিওপোলেও চলছে তুমুল লড়াই। কয়েক ঘন্টা ধরে চলা বোমাবর্ষণে শহরটিতে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে রাজধানী কিয়েভের দখল নিতে রুশ বাহিনী এখনও পুরোমাত্রায় অভিযান শুরু করেনি। কয়েক মেইল দীর্ঘ সামরিক কনভয়ের যে ছবি সম্প্রতি স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েছে, তা শহরটির উত্তর সীমান্তে এসে থমকে আছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রগুলো।
স্থলপথে অগ্রসর না হলেও কিয়েভে আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। রাজধানী ও এর সংলগ্ন বেশ কিছু জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে কিয়েভের রাতের আকাশে আগুনের গোলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।