আরও একটা আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালো উত্তর কোরিয়া। আগের মতই উদ্বিগ হল বিশ্ব। তবে গণমাধ্যমের আলো ক্ষেপণাস্ত্রটি নয়, এবার পুরোটা কেড়ে নিলেন দেশটির নেতা কিম জং উন।
কয়েক সপ্তাহ পরপর বিভিন্ন মাত্রার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো উত্তর কোরিয়ার জন্য নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আর হুমকিকে উপেক্ষা করে সফলভাবে মিসাইল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে নিজেদের সামরিক সক্ষমতার কথা বিশ্বকে জানিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
প্রতিবারই আগের বারের চেয়ে আরও উন্নত, আরও শক্তিশালী, আরও দূরে আঘাত হানার ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র সামনে আনে দেশটি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে উৎক্ষেপণের যে ভিডিও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রচার করেছে, বিশ্বজুড়ে তাই চর্চার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রায় প্রতিবারের মত এবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময় উৎক্ষেপণস্থলে উপস্থিত ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বময় শাসক কিম জং উন। তবে অন্যান্য সময়ের মত এবার তার পরনে ছিলনা চিরপরিচিত ফরমাল স্যুট। তার পরিবর্তে তিনি পড়ে এসেছিলেন কালো রঙের চকচকে আটোসাটো চামড়ার এক জ্যাকেট। আর চোখে ছিল কালো গোল একটা সানগ্লাস। অনেকটা যেন হলিউডের কোন আকশন হিরো।
ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায়, একটি বিমান রাখার হ্যাঙ্গারের বিশাল দরজা ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে। ভেতরে দাঁড়িয়ে কিম জং উন। নাটকীয় ভঙ্গিতে বাইরে বেরিয়ে এসে এগোতে থাকেন তিনি। তার সাথে যোগ দেন দু’জন সিনিয়র সেনা অফিসার।
তাদের নিয়ে দৃড় পদক্ষেপে হাটতে হাটতে মিসাইল উৎক্ষেপণস্থলে পৌছান কিম। হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন উৎক্ষেপণের সময় হয়েছে কিনা। নিজেদের ঘড়িতে সময় দেখেন সাথে থাকা দুই অফিসারও।
‘নির্দিষ্ট সময়’ হওয়ার পরপরই মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নির্দেশ দেন কিম। সাথে সাথে ইঞ্জিন চালু হয়ে, চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে, আস্তে আস্তে ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে উত্তর কোরিয়ার নিজেদের তৈরি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াসং-১৭। ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে দূরপাল্লার মিসাইলটির যাত্রা দেখানো হয় ভিডিওটিতে।
১৫ মিনিটের ভিডিওর পুরোটা অংশ জুড়েই বাজছিল থ্রিলার মুভির মত উত্তেজনাকর আবহ সঙ্গীত।
আজকের হোয়াসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চালানো হয় পিয়ংইয়ং সুনান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি।
আজকের ভিডিওটি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনের মাঝে প্রচার করা হয়। বুলেটিনটি উপস্থাপনা করেন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে আলোচিত সংবাদ পাঠিকা রি চুন-হি। দেশটির সাবেক দুই শাসক কিম ইল সাং ও কিম জং ইলের মৃত্যু, দেশটির প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষাসহ উত্তর কোরিয়ার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ খবর উপস্থাপনার সৌজন্যে রি নিজ দেশে তো বটেই, বহির্বিশ্বেও অত্যন্ত পরিচিত মুখ।
উত্তর কোরিয়ার এই একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেলে সারাদিন ধরে দেশটির শাসক কিম পরিবারের স্তুতি কিংবা সামরিক কুচকাওয়াজ কিংবা জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র দেখানো হতে থাকে। আর অবশ্যই থাকে সংবাদ, যার সিংহভাগ জুড়ে প্রচারিত হয় কিম জং উনের কর্মকান্ড অথবা তার প্রয়াত পিতা ও পিতামহের বন্দনা, যারা তার পূর্বে কয়েক দশক ধরে উত্তর কোরিয়া শাসন করেছেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রচলিত ধারার সংবাদের মাঝে পশ্চিমা ধাচের সাজপোশাক, আবহ সঙ্গীত আর নাটকীয়তায় মোড়া এহেন ভিডিও সম্প্রচার আলোচনার জন্ম দিয়েছে দেশটির ভেতরে, বাইরে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়মিত ধারার বাইরে গিয়ে একদম ভিন্ন আমেজে মিসাইল পরীক্ষার ভিডিও নির্মাণ ও সম্প্রচারের পেছনে হয়ত কিম জং উনের ব্যক্তি ভাবমূর্তি পুনঃর্বিন্যাসের প্রচেষ্টা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিমের যতগুলো ভিডিও উত্তর কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, তাতে তার অতিরিক্ত ওজনের বিষয়টি কারও নজর এড়ায়নি। কোন কোন ভিডিওতে ওজনের কারণে কিমের এমনকি স্বাভাবিকভাবে হাটতেও সমস্যা হওয়ার বিষয়টি চোখে পড়েছে। সেগুলোর তুলনায় এবারের ভিডিওতে তাকে অনেকটাই সুস্বাস্থ্যবান ও ঝরঝরে দেখা গেছে।