ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় স্বল্প ব্যবধানে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন ইমানূয়েল ম্যাক্রো। তিনিসহ কোন প্রার্থীই অর্ধেকের বেশি ভোট না পাওয়ায় ম্যাক্রো ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া ডানপন্থী ম্যারি লে পেনের মধ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে দু’সপ্তাহ পর আগামী ২৪ এপ্রিল।
ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য গতকাল সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভোট দেন দেশটির নাগরিকেরা। বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইমানূয়েল ম্যাক্রো দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য আবারো প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। তার বিপরীতে বেশ কয়েক প্রার্থী থাকলেও ম্যাক্রোর মূল প্রতিদ্বন্দী হিসেবে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন কট্টর ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী নেত্রী ম্যারি লে পেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ইমানূয়েল ম্যাক্রো ও ম্যারি লে পেনের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দীতা হয়েছিল। সেবার দু’দফাতেই লে পেনকে হারিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ম্যাক্রো।
এবারও প্রথম দফার ভোট গণনা শেষে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট পদে ইমানূয়েল ম্যাক্রো পেয়েছেন ২৭.৩৫ শতাংশ ভোট আর ম্যারি লে পেন পেয়েছেন ২৩.৯৭ শতাংশ।
বাকি প্রার্থীদের মধ্যে বামপন্থী জিন-লুক মেলেনকোন পেয়েছেন ২১.৭ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফার ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে এক-পঞ্চমাংশ ভোট পাওয়া জিন-লুকের সমর্থকেরাই ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন।
জিন অবশ্য এরই মধ্যে তার সমর্থকদেরকে ম্যারি লে পেনকে ভোট না দেওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। তবে তিনি ইমানূয়েল ম্যাক্রোর প্রতিও অন্তত এখন পর্যন্ত সমর্থন ঘোষণা করেননি। প্রথম দফায় অংশ নেওয়া বাকি নয় প্রার্থীর অনেকেই এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটে ম্যাক্রোকে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব মিলিয়ে বারো জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করলেও উল্লেখযোগ্য ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন কেবল ম্যাক্রো, লে পেন ও জিন-লুক। তারা প্রত্যেকেই ২০ শতাংশের ওপর ভোট পেয়েছেন। বাকি নয় জনের কারোরই ভোটের হার ১০ শতাংশও অতিক্রম করেনি।
কয়েক সপ্তাহ আগেও মনে করা হচ্ছিল এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশ স্বচ্ছন্দেই জিতে যাবেন ইমানূয়েল ম্যাক্রো। তার শাসনামলে ফ্রান্সের অর্থনীতি মোটের ওপর নিয়ন্ত্রণেই ছিল। গত দু’বছর করোনার প্রকোপের সময় ফরাসি অর্থনীতিতে অন্যান্য দেশের মত ধাক্কা লাগলেও তা দ্রুতই সামলে উঠতে পেরেছিল ফ্রান্স। দেশটিতে করোনার সংক্রমণ ও এর জেরে মৃত্যু কোন কোন সময় উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌছালেও পশ্চিমা বিশেষ করে ইউরোপের অনেক প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ফ্রান্সের পরিস্থিতি মোটামুটি ভালোভাবেই সামলাতে পেরেছিল ম্যাক্রোর প্রশাসন। আর সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দফায় দফায় বৈঠকসহ নানা কূটনৈতিক তৎপরতার জেরে বহির্বিশ্বে ইমানূয়েল ম্যাক্রোর ভাবমূর্তি উল্লেখযোগ্যভাবে উজ্জ্বল হয়। এসব অর্জনের কারণে গণমাধ্যমগুলো আভাস দিচ্ছিল, প্রথম দফার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীদের থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন ম্যাক্রো।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রধান প্রতিদ্বন্দী ম্যারি লে পেনের সাথে তার ভোটের ব্যবধান ৪ শতাংশেরও কম। সংবাদ মাধ্যমগুলো এখন বলছে, নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিনগুলোতে প্রচারণার চেয়ে ম্যাক্রোর ইউক্রেন নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকাকে ভালো চোখে দেখেননি ফরাসি ভোটাররা। তারই প্রতিফলন ঘটেছে ভোটবাক্সে।
অবশ্য তার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দীদের বেশিরভাগই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ম্যাক্রোকেই সমর্থন জানানো শুরু করায় ধারণা করা হচ্ছে, পরবর্তী দফার ভোটে ম্যারি লে পেনকে অনেকটাই পেছনে ফেলতে সক্ষম হবেন ইমানূয়েল ম্যাক্রো।
তবে এসব অনুমানে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকছেন না ম্যাক্রো। প্রথম দফার নির্বাচনে জয়ের ব্যবধান আশানুরূপ না হওয়ায় পরের দফার জন্য প্রচারণায় আরও বেশি সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ম্যাক্রোর নির্বাচনী টিম ফ্রান্স জুড়ে তার সমর্থনে বড় বড় সমাবেশ ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিপরীতে ম্যারি লে পেনও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর শাসনামলের ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরে সারা দেশে জনমত তার পক্ষে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ম্যাক্রোর কাছে প্রথম, দ্বিতীয় দু’দফাতেই পরাজিত হয়েছিলেন লে পেন। পাচ বছর বাদে এবারের নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটে পিছিয়ে থাকলেও দ্বিতীয় দফায় তার পুনরাবৃত্তি চাননা তিনি। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইমানূয়েল ম্যাক্রোকে হারিয়ে এলিজি প্রাসাদের বাসিন্দা হতে তাই সম্ভাব্য সবকিছুই করবেন ম্যারিওন আন্না পেরিন লে পেন।