বেশ কিছুদিন শান্ত থাকার পর আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে। আজ এই মসজিদে ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরায়েলি পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তাদের লক্ষ্য করে পাথর, বাজি প্রভৃতি ছুড়ে আক্রমণ চালায় ফিলিস্তিনিরা। তাদের প্রতিহত করতে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে পুলিশ। এসময় সংঘর্ষ বেধে যায় দু’পক্ষের মধ্যে। পুলিশ বলছে, তাদের তিন সদস্য আহত হয়েছেন আজকের ঘটনায়।
জেরুজালেমে অবস্থিত আল আকসা মসজিদটি মুসলিম ও ইহুদি, উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিমদের কাছে আল আকসা হলেও ইহুদিদের কাছে এটি পরিচিত টেম্পল মাউন্ট হিসেবে।
আল আকসা মসজিদ এবং এর সংলগ্ন প্রাঙ্গণের অধিকার নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই বিবাদ চলে আসছে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। প্রায়ই সেই বিবাদ পরিণত হয় রক্তপাতে। এমনকি অতীতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধেরও সূচনা হয়েছে আল আকসার সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে।
দু’পক্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনি ও আরব ইসরায়েলিদের চালানো হামলা থেকে। গত দু’সপ্তাহে এরকম চারটি হামলার ঘটনা ঘটেছে ইসরায়েলে। এসব হামলার ১২ জন ইসরায়েলি ও ২ জন ইউক্রেনের নাগরিক নিহত হয়েছেন। গত দেড় দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি ভূখন্ডে এগুলোই ছিল ফিলিস্তিনিদের চালানো সবচেয়ে প্রাণঘাতি হামলা।
ইসরায়েলের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও এতগুলো সশস্ত্র হামলা ও প্রাণহানির ঘটনায় স্বভাবতই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশটিতে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের সেনা ও পুলিশ বাহিনী। এতে নিহত ও আহত হয়েছে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নাগরিক।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে এক ফিলিস্তিনির হামলার ৩ জন ইসরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়। এর পরপরই ফিলিস্তিনের পশ্বিম তীরের জেনিন অঞ্চলে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় ২০ জনের বেশি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
এছাড়া জেনিনে আরেক অভিযানে ১৭ বছরের এক ফিলিস্তিনি কিশোরের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আল আকসা মসজিদে চলা আজকের সংঘাতের বিষয়ে ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল চারটায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের পতাকা হাতে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয় কয়েকশো ফিলিস্তিনি। এরপরই তারা প্রাঙ্গণের পশ্চিম দেয়াল বরাবর পাথর, বাজিসহ বিভিন্ন বস্তু ছুড়তে থাকে। উল্লেখ্য, আল আকসার পশ্চিম অংশ ইহুদিদের উপাসনার জন্য নির্ধারিত।
নিজেদের দাবির স্বপক্ষে ইসরায়েলের পুলিশ ও পররাষ্ট্র দপ্তর টুইটারে একাধিক ভিডিও পোস্ট করে। সেগুলোতে দেখা যায়, মুশোখ পড়া একদল তরুণ আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণের ভেতর থেকে পাথরের পাশাপাশি জ্বলন্ত বাজি ছুড়ে মারছে। বাজিগুলো ফুলকি ছড়াতে ছড়াতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং শব্দ করে বিস্ফোরিত হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, হামলার পর তা প্রতিহত করতে তারা তৎক্ষণাৎ মসজিদ প্রাঙ্গণে না ঢুকে সেখানে চলা শুক্রবারের নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। নামাজের পর তারা সেখানে প্রবেশ করে অভিযান চালায়।