অস্ট্রেলিয়ায় ক্ষমতা হারাতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং তার দল কনজারভেটিভ পার্টি। সংসদ নির্বাচনে জিতে দীর্ঘ নয় বছর পর আবারও দেশটির ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিরোধীদল লেবার পার্টি।
শনিবার অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের প্রধান প্রতিদ্বন্দী ছিলেন লেবার পার্টির নেতা আন্থনি আলবানেজ। ভোটগণনার পর দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত বিরোধী লেবার পার্টি সংসদের ৭৩ টি আসনে বিজয় নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা পেয়েছেন ৫১ টি আসন।
অস্ট্রেলিয়ায় সরকার গঠনের জন্য কোন দলকে সংসদের কমপক্ষে ৭৬ টি আসন জয়লাভ করতে হয়। লেবাররা সেই ম্যাজিক ফিগার থেকে ৩ টি আসন দূরে থাকলেও স্বতন্ত্র সাংসদদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে খুব একটা বেগ পেতে হবেনা লেবার নেতা আন্থনি আলবানেজকে।
ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত হওয়ার পর সিডনিতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন আন্থনি আলবানেজ। অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী আলবানেজ বলেন, আজ রাতে অস্ট্রেলিয়ার জনগণ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছে। নিজের সংগ্রামী পারিবারিক অতীতের কথা স্মরণ করে আলবানেজ বলেন, এই নির্বাচন আমাদের দেশের সেই মহত্ত্বকেও তুলে ধরেছে, যেখানে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া এক মায়ের সন্তান, যার শৈশব কেটেছে রাস্তার ধারের সাধারণ এক সরকারি আবাসনে, তিনিও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়ে আজ আপনাদের সামনে দাড়াতে পেরেছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় লেবার পার্টির স্লোগান ছিল, ‘বিপ্লব নয়, সংশোধন’। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির জন্য এবারের নির্বাচন ছিল প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সরকারের কাজের মূল্যায়ন। প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী মরিসনকে বিরোধীদের প্রতি আক্রমণাত্মক হওয়ার পরিবর্তে অনেক আত্মরক্ষামূলক হতে দেখা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে জনগণ যতটা না বিরোধী লেবারকে সমর্থন করেছেন, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের প্রত্যাখান করেছেন। আর এই বাস্তবতাতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চতুর্থবারের মত বিরোধীদল থেকে ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছে লেবার ফল।
এদিকে চূড়ান্ত ফলাফল আসার আগেই পরাজয় মেনে নিয়েছেন ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। এক বার্তায় তিনি বলেন, আমি অস্ট্রেলিয়ার জনগণ এবং তাদের পর্যবেক্ষণকে সবসময় সম্মান জানিয়ে এসেছি। এবং তাদের যেকোনো সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত ছিলাম রবং আছি।
নির্বাচনে প্রতিপক্ষ কনজারভেটিভদের চেয়ে লেবাররা বেশ ভাল ব্যবধানে আসন জিতলেও প্রচারণার শুরুর দিনগুলোতে এতটা একপেশে ফলাফলের ধারণা করেননি বিশ্লেষকরা। জনমত জরিপগুলোতেও দু’দলের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা কাছাকাছিই থাকবে বলে দেখা যাচ্ছিল। এমনকি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরও ইঙ্গিত ছিল কোন কোন বিশ্লেষণে। প্রধানমন্ত্রী মরিসন ও তার প্রতিপক্ষ আলবানেজ, কারো প্রতিই জনসমর্থন একবারের জন্যও ৫০ শতাংশ অতিক্রম করেনি কোন জনমত জরিপেই।
তবে শেষবেলার প্রচারণায় বাজিমাত করেন আন্থনি আলবানেজ। ২৩ বছর সাংসদ থাকা এই নেতা কনজারভেটিভদের শাসনের বিরুদ্ধে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের বড় একটা অংশকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হন।
অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের শাসনামলে স্কট মরিসনের সরকার যুগান্তকারী বা মনে রাখার মত এমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি যা তাদের আলাদা ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারত ভোটারদের মধ্যে। করোনা পরিস্থিতি শুরুর দিকে ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারলেও এর বাইরে বড় কোন অর্জন ছিলনা কনজারভেটিভ সরকারের। বরং প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের আত্মকেন্দ্রিক শাসন বিভিন্ন সময় আলোচনা, সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশটিতে।
বিপরীতে সবার সাথে মিলে, সমষ্টিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বিরোধী দলনেতা আন্থনি আলবানেজ। এছাড়া ক্ষমতায় এলে নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা, শিশুদের যত্ন, প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় বরাদ্দ আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হন আলবানেজ।