উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত পারমাণবিক হুমকির মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আরও বেশি সামরিক মহড়ার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। আজ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউলের সাথে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এটি জো বাইডেনের প্রথম দক্ষিণ কোরিয়া সফর। এর আগে বারাক ওবামার শাসনামলে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটি সফর করেন তিনি। এর আগে সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রেখেছিলেন। তার একটি সফরে দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী ডি-মিলিটারাইজড জোনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছিল ট্রাম্পের।
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার একের পর এক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে কোরিও উপদ্বীপে। পিয়ংইয়ংয়ের উৎক্ষেপিত মিসাইলগুলোর প্রায় প্রতিটিই পরমাণু বোমা বহন করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এমনকি মূল ভূখন্ডেও আঘাত হানতে সক্ষম।
এই প্রেক্ষিতে তিন দিনের সফরে দক্ষিণ কোরিয়া পৌছেছেন জো বাইডেন। সিউলের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ ব্লু হাউজে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউলের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ছাড়াও কোরিও উপদ্বীপের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তিনি।
বৈঠকের পর দু’নেতার যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, দুই প্রেসিডেন্টই মনে করেন যে উত্তর কোরিয়ার চালানো পরমাণু কর্মসূচি শুধু কোরিও উপদ্বীপে না, পুরো এশিয়া এবং সারাবিশ্বেরও শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গভীর হুমকিস্বরূপ। দু’নেতাই উত্তর কোরিয়ার এবছর জুড়ে চালানো একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানিয়েছেন।
আজকের বৈঠকে এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু সামরিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট ইউন। যৌথ বিবৃতিতে এবিষয়ের উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও মার্কিন যুদ্ধবিমান, বোমা ও মিসাইল মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া দু’দেশের সামরিক উপস্থিতি কিভাবে আরও কার্যকরভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কাজ করতে একমত হয়েছে দুই দেশ।
তবে উত্তর কোরিয়ার প্রতি কেবল সামরিক সতর্কবার্তাই নয়, সৌজন্যের হাতও প্রসারিত করেছে সিউল ও ওয়াশিংটন। দেশটিতে সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। পিয়ংইয়ং জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এপর্যন্ত মারা গেছেন ৬৬ বছর।
গোটা পৃথিবীতে আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া ছাড়া একমাত্র উত্তর কোরিয়াতেই এখনও পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চালানো হয়নি। করোনা সনাক্তকরণের পরীক্ষাও দেশটিতে অত্যন্ত অপ্রতুল। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে দূর্বল স্বাস্থ্য পরিষেবার এই দেশে আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ায় সম্ভব হচ্ছেনা।
এই অবস্থায় আজ দু’ঘন্টাব্যাপী শীর্ষ বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উত্তরের প্রতিবেশীর জন্য করোনাকালীন প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রস্তাব দেন। তিনি পিয়ংইয়ংকে এব্যাপারে খোলামনে এবং ইতিবাচকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহবান জানান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ওয়াশিংটন এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়ার কাছে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে এব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া আসেনি বলে জানান বাইডেন।
এদিকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তার পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত তারও কিম জং উনের সাথে মুখোমুখি আলোচনায় বসার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন, সেটা নির্ভর করবে কিম জং উন এধরনের আলোচনার ব্যাপারে কতটা আন্তরিক তার ওপরে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউলও আলোচনার দরজা উত্তর কোরিয়ার জন্য খোলা আছে বলে মন্তব্য করেন।তিনি প্রস্তাব দেন, পিয়ংইয়ং যদি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথে হাটে তাহলে দেশও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে মিলে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী করা এবং সেদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণ কোরিও প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং তাতে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার প্রেক্ষিতে পিয়ংইয়ংয়ের তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সিউল সফর শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিবেশী আরেক মিত্র দেশ জাপান সফর করবেন। সেখানেও উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সাথে তার বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।