সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের তান্ডব যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে ঠিক তখনই তা প্রবল আকারে আঘাত হেনেছে উত্তর কোরিয়ায়। গত মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দেশটির করোনা পরিস্থিতি এভাবে তীব্র আকার ধারণ করায় উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কিম জং উন। শীর্ষনেতার অভিযোগ, স্বাস্থ্য কর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং অদূরদর্শিতার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এখন পর্যন্ত ১০ লক্ষাধিক লোকের কোডিভ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে দেশটিতে করোনা পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত। প্রতিবেশী চীন বা দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা অন্য কোন দেশও তাদেরকে এব্যাপারে বড় মাত্রায় কোন সহযোগিতা করেছে বলে কখনো শোনা যায়নি। ফলে এত বিপুল সংখ্যক লোকের কোভিড আক্রান্ত হওয়াটা দেশটির কর্তৃপক্ষ কিভাবে নিশ্চিত হল তার সদুত্তর মেলেনি।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া যেখানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর জন্যও একসময় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল, সেখানে উত্তর কোরিয়ার মত দেশের জন্য বিষয়টি দুঃস্বপ্নের মত। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এই দেশটির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো একেবারেই ভগ্নপ্রায়। সাধারণ অসুখ ও স্বাস্থ্য সমস্যার জন্যও পর্যাপ্ত ওষুধ, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সরঞ্জামের তীব্র সংকট রয়েছে দেশটিতে।
সেখানে কোভিড-১৯ এর মত জটিল ও সংক্রামক রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় উত্তর কোরিয়ার সমগ্র জনগোষ্ঠীই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে বলে মত আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। এই অবস্থায় করোনার সংক্রমণ আরও বিস্তৃত হওয়া ঠেকাতে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করেছে উত্তর কোরিয়ার সরকার।
আজ কিম জং উনের নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কিম প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণে ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের ভর্ৎসনা করে। তিনি সেনাবাহিনীর মেডিকেল ইউনিটকে অবিলম্বে ওষুধ সরবরাহের দায়িত্ব বুঝে নিতে নির্দেশ দেন। এছাড়া সারাদেশে লকডাউন এবং কর্মক্ষেত্রে জমায়েতের ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারিরও ঘোষণা দেন কিম।
গত দু’বছর ধরে করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বজুড়ে তান্ডব চালিয়ে কয়েক মিলিয়ন লোকের প্রাণ কেড়ে নিলেও উত্তর কোরিয়া কেবল গত সপ্তাহেই প্রথমবারের মত কোন নাগরিকের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি নয়, বরং বহু আগেই করোনা ঢুকেছিল উত্তর কোরিয়ায়। সেইমত গত বছর চীন এবং পশ্চিমা বেশকিছু দেশ উত্তর কোরিয়াকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগী থাকার কথা অস্বীকার করে উত্তর কোরিয়া সেসময় বলেছিল, ২০২০ সালের শুরুতেই তারা তাদের সীমান্ত সিল করে দেওয়ায় তাদের দেশে করোনা ভাইরাস প্রবেশের কোন সুযোগই নেই।
এদিকে উত্তর কোরিয়ায় চলমান করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করলে শুধু স্বাস্থ্য সংকটই নয়, সেই সাথে ভয়াবহ খাদ্য সংকট, এমনকি দেশটিতে দুর্ভিক্ষও হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ কৃষক এবং খাদ্য উৎপাদন ও বন্টনের সাথে জড়িতদের বড় অংশ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসার সুযোগ না পেলে পুরো খাদ্য ব্যবস্থাপনাই ভেঙে পড়বে দেশটিতে।
‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ (ডব্লিউএফপি) এর তথ্যমতে, উত্তর কোরিয়ার আড়াই কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ মানুষই অপুষ্টির শিকার।