মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি প্রাথমিক স্কুলে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় ১৯ শিশু শিক্ষার্থী ও দু’জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন।
দেশটিতে বন্দুক নিয়ে সহিংসতা গত কয়েক বছরে তীব্র আকার ধারণ করেছেন। কিছুদিন পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে এধরনের ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে আজকের ঘটনাটিকে গত দু’দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে দেশটি।
১৮ বছর বয়সী এক তরুণ একটি এআর-১৫ আধা-সয়ংক্রিয় রাইফেল এবং বিপুল পরিমান গুলিভর্তি ম্যাগাজিন নিয়ে আজকের হামলাটি চালায়। টেক্সাসের উভাল্ডে শহরের রব এলিমেন্টারি স্কুলে ৭ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়।
ঘাতক স্কুলটিতে হামলা চালানোর আগে নিজ বাড়িতে তার পরিবারের এক সদস্যকেও গুলি করেছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। ঐ বৃদ্ধা আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। এরপর গাড়িতে করে স্কুলটিতে পৌছায় হামলাকারী তরুণটি।
স্থানীয় সময় সকাল ১১ টা ৩২ মিনিটে স্কুলের ভেতরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে ঘাতক। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পরও আততায়ীকে নিরস্ত করতে না পেরে পুলিশ গুলি করে তাকে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় হামলাকারী। তার সাথে থাকা রাইফেল ও অব্যবহৃত ম্যাগাজিন উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার পর হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। তার নাম সালভাদোর রামোস। সে একসময় ঐ এলাকারই স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, একটি পরিত্যক্ত গাড়িতে করে স্কুল প্রাঙ্গণে ঢোকে রামোস। এসময় তার হাতে রাইফেল ও পরনে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল।
হামলার সময়ে স্কুল প্রাঙ্গণে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক অফিসার রামোসকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরে আশেপাশে থাকা আরও দু’জন অফিসার যোগ দিলেও সশস্ত্র রামোসকে থামানো যায়নি। অফিসাররা এরপর সাহায্যের আবেদন করলে আরও পুলিশ পাঠানো হয় সেখানে।
তবে তারা এসে হামলাকারীকে নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই রামোসের গুলিতে প্রাণ হারায় ১৯ টি নিষ্পাপ শিশু ও তাদের দুই শিক্ষক।
হামলায় নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে রয়েছেন স্কুলটির দুই শিক্ষক ইরমা গারসিয়া ও ইভা মিরেলেস। রব এলিমেন্টারি স্কুল জানিয়েছে, গারসিয়া গত ২৩ বছর ধরে এবং মিরেলেস ১৭ বছর ধরে স্কুলটিতে শিক্ষকতা করছিলেন।
মেক্সিকো সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত এই স্কুলটিতে মূলত হিস্প্যানিক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ লাতিন আমেরিকান বংশোদ্ভূত পরিবারের শিশুরা পড়াশোনা করে। বর্তমানে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী পড়ছে এই স্কুলটিতে।
আজকের হত্যাকান্ডের ঘটনায় সকলের সাথে গভীর মর্মাহত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। হোয়াইট হাউজে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কয়েক দিন পরপর এমন বন্দুক হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে জানাতে তিনি ক্লান্ত। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপে সকলের সমর্থন আহবান করেন তিনি।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটরা অনিয়ন্ত্রিত আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে কড়া আইনের পক্ষে থাকলেও দেশটির অনেক অঙ্গরাজ্য, বিশেষ করে যেখানে রিপাবলিকানরা ক্ষমতায়, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকারের কথা বলে এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছে। সংবিধান অনুযায়ী, সারা দেশে এমন আইন কার্যকর করতে গেলে অঙ্গরাজ্যগুলোর সমর্থন জরুরি।