চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সাথে সরাসরি কথা বলতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুরোধ জানিয়েছেন ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষনেতারা।
আজ পুতিনের সাথে দীর্ঘ ৮০ মিনিট টেলিফোনে কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানূয়েল ম্যাক্রো ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কলৎজ। তিন নেতার এই যৌথ ফোনালাপে ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সেখান থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের জন্য পুতিনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ম্যাক্রো ও স্কলৎজ।
আজকের আলোচনা নিয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সাথে সংলাপ আবার শুরু করতে রাশিয়ার আপত্তি নেই। অবশ্য এমন আলোচনা সরাসরি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যেও মধ্যে হতে পারে কিনা সেব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এব্যাপারে বলেছেন, রাশিয়ার সাথে কথা বলার জন্য তিনি ‘উদগ্রীব’ নন। তবে সংঘাত বন্ধের জন্য সংলাপ জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের মাটিতে রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছে দেশ দু’টির প্রতিনিধিরা। তবে মতবিরোধ এবং অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের ধারাবাহিকতায় কোনোবারই প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি বৈঠকগুলো থেকে।
তাছাড়া প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে তো বটেই, দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়েও এখনও পর্যন্ত আলোচনা হয়নি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে। কেবল প্রশাসনিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে মস্কো আর কিয়েভের আলাপ।
আর আলোচনার এমন ব্যর্থতার সুযোগে যুদ্ধের ময়দানে দিনকে দিন বেড়ে চলেছে প্রাণহানি আর ক্ষয়ক্ষতি। একদিকে রাশিয়া বাকি ইউক্রেন থেকে সেনাদের সরিয়ে এনে তীব্রভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে দেশটির পূর্ব অংশে, আরেকদিকে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের জন্য বিমান বোঝাই করে মাঝারি থেকে ভারী অস্ত্র পাঠিয়ে চলেছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। অর্থাৎ সামনের দিনগুলোতে যুদ্ধে থামার বদলে বাড়ার ইঙ্গিত প্রবল হচ্ছে।
এই অবস্থায় যুদ্ধরত দুই প্রতিবেশীকে শান্তি আলোচনার টেবিলে আনতে উদ্যোগী হয়েছে ইউরোপের আরেক প্রতিবেশী যুগল ফ্রান্স ও জার্মানি।
আজকের টেলিফোন আলাপে দু’দেশের প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর রুশ নেতার প্রতি আরও আহবান জানিয়েছেন সম্প্রতি দখলে নেওয়া মারিওপোলের আজভস্টল ইস্পাত কারখানা থেকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক করা ২,৫০০ ইউক্রেনীয় যোদ্ধাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
ইউক্রেনের দক্ষিণাংশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী মারিওপোলে শেষ প্রতিরোধের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল এই ইস্পাত কারখানাটি। রাশিয়ার বিরামহীন বোমাবর্ষণের জেরে শহরটিতে ইউক্রেনের প্রতিরোধ দূর্বল হতে হতে একসময় ভেঙে পড়ে। ধীরে ধীরে শহরের বাকি পুরো অংশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। তবে আজভস্টল ইস্পাত কারখানায় ঘাটি গেড়ে শক্ত অবস্থান নেয় মারিওপোলে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের শেষ দলটি। কিন্তু সপ্তাহের পর সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকায় একসময় খাদ্য, ওষুধ, রসদ সংকটে পড়ে তারা। এই অবস্থায় জাতিসংঘ ও রেডক্রসের মধ্যস্ততায় কারখানাটি থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়া হয় আর ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করে রুশ বাহিনীর হাতে।
রাশিয়া জানিয়েছে, আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধাদের মধ্যে ৯০০ জনকে রুশ-অধিকৃত দোনেৎস্ক প্রদেশের ওলেনিভকা এলাকার একটি কারাগারে রাখা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত যোদ্ধাদের ঐ প্রদেশেরই নোভোয়াজোভস্ক শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইউক্রেন আশা করছে, বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে এই আটক সেনাদের মুক্ত করা সম্ভব হবে। এত সংখ্যায় না হলেও বেশ কিছু রুশ সেনা বিভিন্ন সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের হাতে বন্দি হয়েছে। রাশিয়া অবশ্য বন্দিবিনিময়ের সম্ভাবনা নিয়ে এখনও কোন মন্তব্য করেনি। উপরন্তু দেশটির কট্টরপন্থী কিছু সাংসদ আটক ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের বিচার এমনকি মৃত্যুদন্ডেরও দাবি তুলেছে।
আজকের ফোনালাপে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্যও ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুরোধ জানান ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষনেতারা। গমসহ ইউক্রেনে ঊৎপাদিত বিপুল শস্যের বড় একটি অংশ এই বন্দর দিয়ে বহির্বিশ্বে রপ্তানি হয়।
পুতিন এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলেও রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের জারি করা অবরোধ প্রত্যাহারেরও পাল্টা দাবি তোলেন।