উত্তর কোরিয়ার একঝাঁক মিসাইল পরীক্ষার পরদিনই আটটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে জবাব দিল দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গত কয়েকমাস ধরে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা প্রচারের জন্য অনেকটা নিয়মিতভাবেই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এতদিন কেবল কড়া বিবৃতি আর নিষেধাজ্ঞা দিয়েই পিয়ংইয়ংয়ের এসব কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়ে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও এর পশ্চিমা মিত্ররা। কখনো কোন সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়নি দেশগুলোকে।
তবে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। উদারপন্থী মুন জায়ে ইনের মেয়াদ শেষে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডানপন্থী, জাতীয়তাবাদী ইউন সুক-ইয়োল। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিতে থাকেন দক্ষিণের এই প্রেসিডেন্ট।
আজও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে মিসাইল উৎক্ষেপণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়োল বলেন, প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে উস্কানিমূলক আচরণ করা হলে তার সরকার এর কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের ওপর নূন্যতম আঁচড়ও তার সরকার লাগতে দেবেনা বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ইয়োল।
রাজধানী সিউলে আজ কোরিও যুদ্ধের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে যে এটি এখন আর শুধু কোরিও উপদ্বীপই নয়, পুরো এশিয়া এমনকি সারাবিশ্বের শান্তির জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।
গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নিয়মিত যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়। উত্তর কোরিয়া বরাবরই এধরনের মহড়ার কঠোর নিন্দা জানিয়ে এসেছে। দেশটি এসব মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে অভীহিত করে থাকে।
যৌথ সামরিক মহড়ার পরপরই রবিবার উত্তর কোরিয়া দেশটির পূর্ব উপকূল থেকে একযোগে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাদের জবাব দেওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও নিজ নিজ ভূখন্ড থেকে যৌথভাবে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য আটটি দূরপাল্লার মিসাইল উৎক্ষেপণ করে। এর মধ্যে সাতটি দক্ষিণ কোরিয়া এবং একটি যুক্তরাষ্ট্রের মাটি থেকে ছোড়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে দক্ষিণ কোরিয়ার এমন কড়া প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশটি তাদের আপাত শান্ত প্রতিরক্ষা নীতি থেকে সরে আসছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অতীতে উত্তর কোরিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরও এভাবে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সিউলকে। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট যে উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে কড়া অবস্থান নিতে চলেছেন, এসব তৎপরতায় তা স্পষ্ট।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তর কোরিয়া বিভিন্ন সময় সব মিলিয়ে বেশ কয়েক ডজন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলও, গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত যার পরীক্ষা চালিয়েছিল পিয়ংইয়ং।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এধরনের মিসাইল পরীক্ষার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। অতীতে বিভিন্ন সময় তা না মানায় দেশটির ওপর অবরোধ আরোপসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, উত্তর কোরিয়ার এবারের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়টি দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচারিতই হয়নি। সচরাচর যা অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে করে থাকে দেশটি। ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণেই সচেতনভাবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করেনি পিয়ংইয়ং।