আল কায়েদার শীর্ষনেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন জাওয়াহিরি।
ওসামা বিন লাদেনের পর আল কায়েদার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নেতাকে হত্যার কথা হোয়াইট হাউজে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
লাদেন এবং জাওয়াহিরি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের টুইট টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক স্থাপনায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। ৯/১১ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ওপর আল কায়েদার চালানো আরও অনেক হামলায় লাদেনের প্রধান সহযোগী ছিলেন আয়মান আল জাওয়াহিরি।
এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ১৯৯৮ সালে কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলা, যাতে ২২৩ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং ২০০০ সালে এদেন সাগরে নোঙর করে রাখা মার্কিন যুদ্ধাজাহাজ ইউএসএস কোলে হামলা, যেখানে মারা গিয়েছেন ১৭ মার্কিন নৌসেনা।
এই জুটির তৎপরতাতেই আফগানিস্তানের স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন থেকে ধীরে ধীরে একসময় সারাবিশ্বের ত্রাস হয়ে ওঠে আল কায়েদা। তাদের ধরতে নিজেদের তৎপরতার বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র এ দু’জনের মাথার দাম নির্ধারণ করে কয়েক মিলিয়ন ডলার।
২০১১ সালে পাকিস্তানের আবোটাবাদে মার্কিন সেনা অভিযানে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু হলে আল কায়েদার নতুন নেতা হন জাওয়াহিরি।
আর আজ কাবুলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ পরিচালিত ড্রোন হামলায় জাওয়াহিরির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আল কায়েদার অপর স্তম্ভেরও পতন ঘটল।
মার্কিন বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ড্রোন অভিযানের সময় জাওয়াহিরি বাড়িটির বারান্দায় অবস্থান করছিলেন। ড্রোন থেকে ছোড়া দু’টো মিসাইল তখনই সেখানে আঘাত করে তাকে হত্যা করে।
বাড়িটিতে জাওয়াহিরির পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও হামলায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এর কারণ জাওয়াহিরির ওপর হামলাটি চালানো হয়েছে বিশেষ এক ধরনের মিসাইল দিয়ে।
এ ধরনের মিসাইলে বিস্ফোরকের পরিবর্তে ভেতরে করাত সংযোজিত থাকে। আঘাত হানার ঠিক আগ মূহুর্তে করাতগুলো বেরিয়ে আসে এবং লক্ষ্যবস্তুকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
প্রচলিত মিসাইলের বিস্ফোরণের ধাক্কায় অনেক বেসামরিক লোকজনের হতাহতের প্রেক্ষিতে মার্কিন বাহিনী সম্প্রতি নতুন এই ধরনের মিসাইলের উদ্ভাবন করেছে, যা আশেপাশে অন্য কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ না করেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
কাবুলে হামলা চালিয়ে জাওয়াহিরিকে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরে অনুমতি না নিয়ে মার্কিন বাহিনীর এই অভিযানকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে অভীহিত করেছে।
আর মার্কিন বাহিনীর বক্তব্য, আল কায়েদার শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযানের নৈতিক ভিত্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, জাওয়াহিরিকে আশ্রয় দিয়ে বর্তমান আফগান তালেবান সরকারই বরং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
২০২০ সালে স্বাক্ষরিত এক শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, আল কায়েদা বা এ জাতীয় কোনো উগ্রপন্থী সংগঠন বা তাদের কোনো নেতাকে নিজ ভূখন্ডে আশ্রয় দেবেনা তালেবানরা। সেখানে আফগানিস্তানের একেবারে রাজধানী শহরের মধ্যে আয়মান আল জাওয়াহিরির দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকা সেই চুক্তিরই লঙ্ঘন বলে দাবি করছে মার্কিন বাহিনী।
প্রায় ২০ বছর আফগানিস্তানে অবস্থানের পর গতবছর সেখান থেকে পুরোপুরি নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর কয়েক মাসের মধ্যেই আশরাফ ঘানির ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে কাবুলের শাসনভার দখল করে তালেবান।
কাবুলে আয়মান আল জাওয়াহিরির বিরুদ্ধে চালানো এই হামলাই হল নিজেদের প্রত্যাহারের পর আফগান মাটিতে মার্কিন বাহিনীর প্রথম সামরিক অভিযান।