পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট রোচ কাবোরেকে বন্দী করেছে দেশটির সেনাবাহিনীর একদল বিদ্রোহী সদস্য। আজ এক সামরিক অভ্যুত্থানে তারা প্রেসিডেন্ট কাবোরেকে ক্ষমতাচ্যুত করে। বিদ্রোহীরা দেশটির সেনাপ্রধানেরও পদত্যাগ দাবি করেছে।
অভ্যুত্থান চলাকালে বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওউয়াগাদৌগৌয় অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও সেনা ছাউনির কাছে রাতভর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়।
দেশটির সরকার অবশ্য সেনা অভ্যুত্থান এবং প্রেসিডেন্টের আটক হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদে গোলাগুলির আওয়াজকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন বিপথগামী সদস্যের অসন্তোষের বহিপ্রকাশ হিসেবে অভিহীত করা হয়।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে যে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে একটি সেনা ক্যাম্পে আটক করে রেখেছে বিদ্রোহী সৈন্যরা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওচিত্রে একাধিক সাজোয়া যান রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় যেগুলো প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হত। গাড়িগুলো বুলেটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় ছিল।
রাজধানীতে থাকা সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, শহরের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। অভ্যুত্থানকারী বিদ্রোহী সেনারা টেলিভিশনের ভবনগুলো ঘিরে রেখেছে। টেলিভিশনগুলো আজ কোন সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছেনা।
অভ্যুত্থানের পর রবিবার শত শত সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন জানায়। তারা বুরকিনা ফাসোর ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাজধানীতে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে।
এই মূহুর্তে প্রেসিডেন্ট কাবোরে কোথায় আছেন, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তিনি এবং তার সরকারের মন্ত্রীরা রাজধানীর সানগৌলে সেনা ব্যারাকে আটক অবস্থায় আছেন।
রবিবার রাত থেকে প্রেসিডেন্ট রোচ কাবোরের সাথে সবরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট সর্বশেষ এক টুইট বার্তায় বুরকিনা ফাসোর জাতীয় ফুটবল দলকে চলমান আফ্রিকান কাপের ম্যাচ জেতার জন্য টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় রাজধানীর প্রকৃত অবস্থা স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছেনা। সরকার এবং বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক কোন বার্তা পাওয়া যাচ্ছেনা।
বুরকিনা ফাসোর সর্বশেষ এই সংকটের সূত্রপাত গত সপ্তাহে কথিত এক সেনা অভ্যুত্থানের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। ঐ ঘটনায় ১১ সেনা সদস্যকে আটক করা হয়।
তবে দেশটিতে অস্থিরতা চলে আসছে আরও আগে ২০১৫ সাল থেকে। ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সেনাবাহিনীসহ দেশটির বিভিন্ন মহলে।
গত নভেম্বরে সন্দেহভাজনজঙ্গিদের হাতে ৫৩ জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য। এই ঘটনা সেনাবাহিনীকে সরকারের বিরুদ্ধে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে ঠিক একই রকম পরিস্থিতিতে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল প্রতিবেশী দেশ মালিতেও। সেখানেও ক্ষমতাচ্যুত হন প্রেসিডেন্ট। বুরকিনা ফাসোর মত মালিতেও সাধারণ জনগণ স্বাগত জানায় অভ্যুত্থানকে।
বুরকিনা ফাসোর বিদ্রোহী সেনাদের বেশ কিছু দাবিদাওয়া রয়েছে। তারা বর্তমান সেনাপ্রাধান এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের অপসারণ চান। জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মোতায়েন সেনার সংখ্যা আরো বাড়ানোরও দাবি তাদের। এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে আহত সৈন্যদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং তাদের পরিবারের জীবনধারণের সুব্যবস্থারও দাবি জানাচ্ছে তারা।
আফ্রিকার পশ্চিমাংশের দেশ বুরকিনা ফাসো একসময় ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। তবে স্বাধীনতার পর থেকে নানা রাজনৈতিক অসন্তোষের সাক্ষী হয়েছে দেশটি।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামিক জিহাদিদের সশস্ত্র তৎপরতা বুরকিনা ফাসোর সরকারকে একদিকে দূর্বল করে দিয়েছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে দেশটির একসময়ের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শিল্পকে।