সামরিক অভ্যুত্থানের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবারও রাজনৈতিক সংকটে সুদান। তীব্র জনঅসন্তোষের জেরে ক্ষমতা ছাড়লেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক।
কয়েক সপ্তাহ আগে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে করে সুদানের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। শুরুতে এর প্রতিবাদ জানালেও কিছুদিন পূর্বে সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতায় আসেন হামদক। সেই বোঝাপড়া মোতাবেক সুদানের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন আবদাল্লা হামদক। দাবি করেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে সুদানে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য অভ্যুত্থানকারী সেনাবাহিনীর সাথে ঐক্যমত্যে আসাই ছিল সর্বোত্তম পন্থা।
কিন্তু হামদকের এই অবস্থানকে ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার প্রধানমন্ত্রীত্বকে চ্যালেঞ্জ জানায় দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা। তারা অবিলম্বে আবদাল্লা হামদকের পদত্যাগ দাবি করে রাজপথে নেমে আসে।
সেনাবাহিনীর সাথে হামদকের সমঝোতাকে গণতন্ত্রের সাথে বিশ্বাসঘতকতা অভিহীত করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী খার্তুমসহ সুদানের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ করে আসছিল বিপুল সংখ্যক মানুষ।
এই আন্দোলনের জেরেই কয়েক দফা চেষ্টা করেও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীসভা গঠন করে উঠতে পারেননি আবদাল্লা হামদক। আর এবার নিজের প্রধানমন্ত্রীর পদটিও ছেড়ে দিতে হল তাকে।
পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতীয় সনদ প্রস্তুত করা এবং সুদানে পূর্ণাঙ্গভাবে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার রোডম্যাপ প্রস্তুতের জন্য সব পক্ষকে সাথে নিয়ে একটি সম্মিলিত গোলটেবিল আলোচনার প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাকে দেওয়া দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার এবং অন্য কোন পুরুষ কিংবা নারীকে এই সুযোগ দেওয়ার যিনি সুদানকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানানোর বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করবেন।
হামদক আরও বলেন, আমি বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করে গেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছি।
জনগণের প্রতিবাদের মুখে হামদক সরে দাড়ালেন ঠিকই কিন্তু এই পদত্যাগও সুদানের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান না ঘটিয়ে এটিকে কেবল আরও দীর্ঘায়িতই করবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তিন বছর আগে প্রবল গণবিক্ষোভের মুখে দেশটির দীর্ঘ সময়ের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতনের পর সুদানে একের পর এক রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত রয়েছে।
আবদাল্লা হামদক আদতে একজন অর্থনীতিবিদ। জাতিসংঘের সাবেক এই কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক মহলে বেশ শ্রদ্ধার চোখের দেখা হয়। ২০১৯ সালে ক্ষমতা ভাগাভাগির এক চুক্তির আওতায় সুদানের প্রধানমন্ত্রী হন হামদক। ঐ চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তার কিছুদিনের মধ্যেই দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথে বেসামরিক প্রশাসনের দ্বন্দ বাড়তে শুরু করে। সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব কমাতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে অচলাবস্থার জেরে ২৫ অক্টোবর আবদাল্লা হামদককে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং গৃহবন্দী করা হয়।
তবে এর এক মাসের মাথায়ই সেনাবাহিনীর সাথে আরেক সমঝোতার প্রেক্ষিতে আবারও স্বপদে পুনর্বহাল হন হামদক। সেই বোঝাপড়ায় সেনাবাহিনীর তদারকিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা বলা হয়।
কিন্তু এই সমঝোতাকে প্রত্যাখান করে সুদানের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, নবগঠিত সরকার হতে হবে পুরোপুরি বেসামরিক, সেনাবাহিনীর কোন অংশগ্রহণ কিংবা হস্তক্ষেপ সেখানে থাকতে পারবেনা।
বিক্ষোভকারীরা গত বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানী খার্তুম এবং ওমদুরমানের সড়ক ও সেতু অবরোধ করে রেখেছিল। তাদের নিবৃত্ত করতে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। আন্দোলনকারীদের সংগঠিত হওয়া ঠেকাতে ইন্টারনেট সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন রাখা হয় কোন কোন এলাকায়।
হামদকের পদত্যাগের কয়েক ঘন্টা আগেও খার্তুমে অভ্যুত্থানবিরোধী বিশাল এক জমায়েতে নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালালে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর চলা সহিংসতায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে কমপক্ষে ৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন কয়েকশো।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘ হতে হতে একসময় সর্বাত্মক অবলাবস্থায় রূপ নিতে পারে। তাতে দেশের এরই মধ্যে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি আরও বেহাল হয়ে পড়বে।
