কারাবন্দি সৌদি রাজকুমারী এবং মানবাধিকার আইনজীবি বাসমাহ বিনতে সৌদকে তিন বছর পর মুক্তি দিয়েছে দেশটির সরকার। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি রাজধানী জেদ্দায় নিজের বাসভবনে ফিরেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাসমাহর আইনজীবি ও সমর্থকরা।
৫৭ বছর বয়সী প্রিন্সেস বাসমাহ বিনতে সৌদ বিন আব্দুল আজিজ বিন আল সৌদ দেশটির বর্তমান কার্যত শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমানের অসুস্থতা ও ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই পরিচালনা করছেন দেশটির শাসন কার্যক্রম। তবে বিরোধী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর তার নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে দেশে-বিদেশে যথেষ্ঠই সমালোচিত যুবরাজ সালমান। এমনকি সৌদি রাজপরিবারের কোন সদস্যও তার বিরুদ্ধাচরণ করলে তাকেও সালমান রেহাই দেননা বলেই প্রচলিত।
রাজকুমারী বাসমাহও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এমনই প্রতিহিংসার শিকার বলে মনে করা হয়। এবং শুধু বাসমাহই নন, ২০১৯ সালের মার্চে বাসমাহর সাথে তার মেয়ে সৌহৌদ আল শরীফকেও গ্রেফতার করেছিল সৌদি প্রশাসন। গত তিন বছর ধরে তারা দু’জনই কারাবন্দি ছিলেন।
রাজকুমারী বাসমাহ এবং তার মেয়ের মুক্তির ব্যাপারে সৌদি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দেয়নি। বাসমাহর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ৬ জানুয়ারি তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। রাজকুমারী সুস্থই আছেন, কিন্তু তারপরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চান। তিনি জানান, প্রিন্সেস বাসমাহ তার অন্য সন্তানদের সাথে দীর্ঘদিন পর মিলিত হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।
রাজকুমারী বাসমাহ সৌদি আরবের আল-হাইর কারাগারে বন্দি ছিলেন। দেশটির মানবাধিকার কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক রাখার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এই কারাগারটি।
২০১৯ সালে হঠাৎ নিখোজ হয়ে যাওয়ার ১৩ মাস পর হঠাৎ বাসমাহ নিজে টুইট বার্তায় জানান যে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। তার শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ বলেও টুইটারে দাবি করেছিলেন প্রিন্সেস বাসমাহ। ২০২০ সালে বাসমাহর করা ঐ টুইটগুলো অবশ্য খুব দ্রুতই মুছে ফেলা হয়েছিল।
ধারণা করা হয়, ঐ সময়ে সৌদি রাজপরিবারের ভিন্নমতাবলম্বী কয়েক ডজন সদস্যকে আটক করে বিলাসবহুল হোটেলে বন্দি করে রাখার যে ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিলে, প্রিন্সেস বাসমাহও তাদের মধ্যে ছিলেন।
সেসময় বন্দি হওয়া অনেকেই পরবর্তীতে সমঝোতার ভিত্তিতে ছাড়া পেয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে বাসমাহর নাম শোনা যায়নি।
প্রিন্সেস বাসমাহ ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন এবং সৌদি যুবরাজ সালমানের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। এছাড়া দেশটিতে নারীদের অধিকার নিয়েও বরাবরই সরব তিনি। সৌদি আরবে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অনুমতি ছাড়া অনেক কাজই নারীরা করতে পারেননা। নারীদের গাড়ি চালানোর মত কাজেও দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞা ছিল সৌদি আরবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবশ্য নারীকেন্দ্রিক অনেক নিষেধাজ্ঞাই শিথিল করেছে সৌদি প্রশাসন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজপরিবারের সরাসরি সদস্য হওয়ায় ধারণা করা হত ভিন্নমতাবলম্বী হলেও প্রিন্সেস বাসমাহর ওপর কোন বিপদ নেমে আসবেনা। কিন্তু যুবরাজ সালমান রাজপরিবারের বাসমাহর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দ্বিধা করেননি। এমনকি যুবরাজের পিতা বর্তমান বাদশাহ সালমানের আপন দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। এছাড়া সাবেক ক্রাউন প্রিন্স (যে যুবরাজ বর্তমান বাদশাহর মৃত্যু বা অবসরের পর পরবর্তী বাদশাহ হবেন) মোহাম্মদ বিন নাইফকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন সালমান।
প্রিন্সেস বাসমাহ সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ সৌদের মেয়ে। সৌদ ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের বাদশাহ ছিলেন।