রবিবার সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন জার্মানির ভোটাররা। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশটির চ্যান্সেলর (জার্মানিতে প্রধানমন্ত্রী পদের নাম) আঙ্গেলা মারকেলের একটানা ১৬ বছরের শাসনের অবসান হতে যাচ্ছে। নিজ দেশ ও ইউরোপে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই নেত্রী আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন এবারের নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দিতা না করার। সেক্ষেত্রে নতুন কোন নেতার হাতেই উঠতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ জার্মানির শাসনভার।
৫৯৮ আসনের জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্দেস্টাগের নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর। প্রায় ছয় কোটির ওপর জার্মান ভোটার ভোট দেবেন এবারের নির্বাচনে। মূল ভোটগ্রহণ রবিবার অনুষ্ঠিত হলেও ডাকযোগে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
আঙ্গেলা মারকেলের রক্ষণশীল দল সিডিইউ গত দেড় দশক ধরে জার্মানির ক্ষমতায় থাকলেও এবারের নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী দলগুলোর সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা উঠে এসেছে জনমত জরিপগুলোতে। তবে সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবারও কোন দলই অর্জন করতে পারবেনা বলে আভাস দিচ্ছে জরিপগুলো। সেক্ষেত্রে জোট সরকার দ্বারাই পরিচালিত হবে জার্মানি।
সাধারণ রীতি অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল থেকেই কাউকে চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সংসদের অধিবেশনে ভোটাভুটির মাধ্যমে তার নিয়োগ অনুমোদন করাতে হয়।
প্রধান প্রধান দলগুলো
এবারের সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনে মোট তিনটি দল জোট সরকার গঠন ও পরবর্তী চ্যান্সেলর পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে।
খ্রীষ্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)
আঙ্গেলা মারকেলের দল সিডিইউ কয়েক দশক ধরেই জার্মান রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আছে। এর মধ্যে গত দেড় দশক একটানা জার্মানির ক্ষমতায় ছিল রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত এই দলটি।
সিডিইউ-র নেতা আরমিন ল্যাশেটকে প্রায়ই আঙ্গেলা মারকেলের উত্তরসূরী হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়া দলটির বাভারিয়া প্রদেশের নেতা মার্কাস সোদেরও রয়েছেন পরবর্তী চ্যান্সেলর হওয়ার দৌড়ে।
সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)
মধ্য-বামপন্থী দল হিসেবে পরিচিত এসপিডি আঙ্গেলা মারকেলের দল সিডিইউ-র জোট সঙ্গী হিসেবে ক্ষমতায় আছে। এবারের নির্বাচনে ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত তারা সিডিইউ-র চেয়ে বেশি আসনে জিততে পারে বলে আভাস দিচ্ছে জনমত জরিপগুলো।
দলটির নেতা ও একই সাথে জার্মানির বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর (উপপ্রধানমন্ত্রী) ও অর্থমন্ত্রী ওলাফ শোলজ এবারের নির্বাচনে দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী।
গ্রিন পার্টি
পরিবেশবাদী এই দলটি বামঘেষা হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মত ইস্যুগুলো দলটির প্রধান আজেন্ডাগুলোর অন্যতম। দলটির নেতা আনালিনা বারবোক কখনো সরকারের কোন পদে থাকেননি। জোট সরকারের অংশ হতে পারলে তাকে সরকারেও দেখা যেতে পারে।
জার্মানির ব্যতিক্রমী নির্বাচনী পদ্ধতি
জার্মানির নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভোটাররা দু’টো ভোট দেন। প্রথমটি স্থানীয় সাংসদকে নির্বাচিত করার জন্য। এভাবে সারাদেশে ২৯৯ জন সাংসদ নির্বাচিত হন। জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতি ২৫০,০০০ নাগরিকের জন্য একজন সাংসদ। যে আসনে যে প্রার্থী সবেচেয়ে বেশি ভোট পান ঐ আসনে তিনিই সাংসদ নির্বাচিত হন।
পরের ভোটটি ভোটাররা দেন দেশ পরিচালনার জন্য যে দল তাদের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সেটিকে। সারাদেশে যে দল যত শতাংশ ভোট পায় তার অনুপাতে নিম্নকক্ষের বাকি ২৯৯ আসন সেই দলগুলোকে বরাদ্দ করা হয়।
অর্থাৎ ৫৯৮ আসনের সংসদে অর্ধেক সদস্য (২৯৯ জন) সরাসরি নির্বাচিত হন এবং বাকি অর্ধেক সদস্য (২৯৯ জন) দলের আলাদা করে পাওয়া ভোটের অনুপাতে বরাদ্দের ভিত্তিতে নিযুক্ত হন।
কখন জানা যাবে ফলাফল?
নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই ভোটগণনা শুরু হয়ে যাবে। অর্থাৎ নির্বাচনের পরদিনই ফলাফল অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তবে যেহেতু জনমত জরিপগুলো কোনো দলেরই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, ফলে শেষ পর্যন্ত কোন কোন দল মিলে জার্মানির পরবর্তী সরকার গঠন করবে আর কেইবা হবেন আঙ্গেলা মারকেলের উত্তরসুরী তা জানতে কয়েক দিন কিংবা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।