জার্মানির সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘ দেড় দশক পর পরাজয়ের স্বাদ পেল চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মারকেলের দল ‘খ্রীষ্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’ (সিডিইউ)। সামান্য ব্যবধানে তাদের পরাস্ত করে বিজয়ী হয়েছে ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (এসপিডি)।
টানা ১৬ বছর চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালনের পর এবারের নির্বাচনে আর অংশ না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন আঙ্গেলা মারকেল। দলের নতুন নেতা হিসেবে আরমিন ল্যাসেটকে মনোনীত করেন মারকেল।
জনমত জরিপে এবারের নির্বাচনে সিডিইউ এবং এসডিপি এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। ভোট গণনার পর প্রাপ্ত ফলাফলেও দেখা যাচ্ছে, দুই দলের মধ্যকার ব্যবধান খুবই অল্প।
‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (এসপিডি) পেয়েছে মোট ভোটের ২৫.৭ শতাংশ। অন্যদিকে ‘খ্রীষ্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’ (সিডিইউ) পেয়েছে ২৪.১ শতাংশ।
পরিবেশবাদী দল ‘গ্রীন পার্টি’ তাদের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ ১৪.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
নির্বাচনে এককভাবে কোন দলই সরকার গড়ার মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় আবারও জোট সরকার পেতে যাচ্ছে দেশটি। উল্লেখ্য, জার্মানিতে সাংসদদের একটি অংশ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন, বাকিরা দলগুলোর পাওয়া ভোটের অনুপাতে নিযুক্ত হন।
ভোটগণনার শুরুর দিকে এসপিডি বেশ ভাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় দলটির নেতা ওলাফ শলৎজ দাবি করেছিলেন, তার দল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তার সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেও শুরু করেন।
তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে এসপিজি-র সাথে ব্যবধান কমিয়ে আনে সিডিইউ।
নির্বাচনে প্রতিপক্ষ হলেও এই দল দু’টি এর আগেও একসাথে মিলে জোট সরকার পরিচালনা করেছে। আঙ্গেলা মারকেলও এ দু’দলের জোট সরকারের চ্যান্সেলর ছিলেন দীর্ঘ সময়। ফলে এবারও শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে উঠতে পারলে আরও একবার সিডিইউ-এসপিডি এর হাতে উঠতে পারে জার্মানির শাসনভার।
তবে দল দু’টি সমঝোতায় পৌছাতে না পারলে অন্যান্য ছোট দলগুলোর সাথে মিলে সরকার গড়ার চেষ্টা করবে সিডিইউ কিংবা এসপিজি। সেক্ষেত্রে গ্রীন পার্টি ও এফডিপি ‘কিংমেকার’ এর ভূমিকা নেবে। দল দু’টি নিজেরা খুব বেশি আসন না পেলেও তাদের সম্মিলিত আসন সিডিইউ কিংবা এসপিডি-কে সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সীমা পার করিয়ে দেবে।
পরিবেশবাদী দল গ্রীন পার্টি ও বামপন্থী দল এফডিপি ৩০ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যে প্রধান দুই দলের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
বিশ্লেষকদের মধ্যে আঙ্গেলা মারকেলের সিডিইউ এবং প্রতিপক্ষ এসপিডি এবার নিজেদের মধ্যে কোন জোট করবেনা। সেক্ষেত্রে জার্মানিতে প্রথমবারের মত তিন দলের সরকার গঠন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে জোটের হিসাবনিকাশে একটি মজার চর্চা চালু রয়েছে। দেশটির একেকটি রাজনৈতিক দল একেকটি নির্দিষ্ট রং দিয়ে পরিচিত। যেমন সিডিইউ কালো, এসপিডি লাল, গ্রীন পার্টি সবুজ ও এফডিপি হলুদ রং দিয়ে চিহ্নিত হয়ে আসছে। অন্যান্য দলেরও রয়েছে নিজস্ব পরিচিতিমূলক রং। যখন একাধিক দল মিলে দেশটিতে জোট সরকার গঠন করে, তখন তাদের মিলিত রং নির্দিষ্ট কিছু প্রতীকের মত দেখায়। তখন ঐ জোটটিকে ঐ প্রতীকের নামে ডাকা হয়।
যেমন এসপিডি, এফডিপি ও গ্রীন পার্টির রং লাল, হলুদ ও সবুজ। এই তিনটি রং ট্রাফিক সিগনালের রংয়ের অনুরূপ। তাই এই তিনটি দল জোটবদ্ধ হলে সেই জোটকে ট্রাফিক সিগনাল কোয়ালিশন নামে ডাকা হয়।
আবার সিডিইউ, এফডিপি ও গ্রীন পার্টির কালো, হলুদ ও সবুজ রং মিলে জামাইকার পতাকার রূপ ধারণ করে। তাই এই তিন দলের জোটকে বলা হয় জামাইকা কোয়ালিশন।
একইভাবে সিডিইউ, এসপিডি ও এফডিপি জোটবদ্ধ হলে তাকে বলে জার্মানি কোয়ালিশন। কারণ তাদের সম্মিলিত রং নিজ দেশ জার্মানির পতাকার সাথে মিলে যায়।
এবারের নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে আন্দাজ করা যাচ্ছে, ট্রাফিক সিগনাল অথবা জামাইকা জোটের মধ্যে কোন একটিই শাসন করবে আঙ্গেলা মারকেল পরবর্তী জার্মানি।