সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের একমাস পর গিনির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন কর্ণেল মামাদি দুমবোয়া।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলফা কোন্ডেকে। কর্ণেল দুমবোয়ার নেতৃত্বেই সংঘটিত হয় অভ্যুত্থানটি।
আকস্মিক এই অভ্যুত্থানের কড়া নিন্দা জানিয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ। ‘আফ্রিকান ইউনিয়ন’ এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ‘একোয়াস’ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে গিনিকে। অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে একোয়াস। আগামী ছয় মাসের মধ্যে গিনিতে সাংবিধানিক শাসন ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে জোটটি।
অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ৪১ বছর বয়সী দুমবোয়া পরিণত হলেন আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধানে। এই মূহুর্তে মহাদেশটির সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান হলেন মালির ৩৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট আসিমি গোইতা। উল্লেখ্য দুমবোয়ার মত গোইতাও সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিজ দেশের ক্ষমতা দখল করেছেন এবং ঘটনাচক্রে তারা দু’জন আগে থেকেই পরষ্পরের বন্ধু।
গিনির রাজধানী কোনাক্রির পঞ্চম মোহাম্মেদ প্রাসাদে শপথ গ্রহণের পর দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট কর্ণেল মামাদি দুমবোয়া বলেন, তার মিশন হল নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে দেশকে সঠিক পথ দেখানো, দূর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা, প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থার সংশোধন করা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।
তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার দেশের করা সকল প্রতিশ্রুতির প্রতি তিনি সম্মান দেখাবেন। মনে করা হচ্ছে, ক্ষমতা দখলের পর স্বল্পতম সময়ে নির্বাচন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার যে অঙ্গীকার সামরিক বাহিনী করেছিল, তারই পুনরাবৃত্তি প্রেসিডেন্ট পদে বসে আজ আবার করলেন কর্ণেল দুমবোয়া।
নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও কবে নাগাদ তা হবে সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেনি সামরিক বাহিনী। তবে তারা ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা থাকবেন তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
তাদের এই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকলে কর্ণেল দুমবোয়াও আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কারণ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন।
অন্যদিকে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট সেনা কর্মকর্তা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন কোন বেসামরিক ব্যক্তিত্ব।
এদিকে যাকে ক্ষমতাচ্যুত করে কর্ণেল দুমবোয়া গিনির মসনদে বসেছেন, সাবেক সেই প্রেসিডেন্ট আলফা কোন্ডে এখন কোথায় এবং কি অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা।
৮৩ বছর বয়সী এই নেতাকে সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা অভ্যুত্থান শুরুর পরপরই আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তবে কর্ণেল দুমবোয়া একটি ফরাসি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশস্ত করেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট কোন্ডে ‘নিরাপদ স্থানে’ রয়েছেন।
অভ্যুত্থানের পরে প্রকাশিত এক ভিডিওতে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আলফা কোন্ডেকে একটি কক্ষে সোফায় পা তুলে বসে থাকতে দেখা যায়। তার পরনে ছিল জিন্স ও ছাপা শার্ট আর পা ছিল খালি।
এসময় কোন্ডের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অভ্যুত্থানকারী দলের অস্ত্রধারী কয়েকজন সেনাসদস্য। ভিডিওতে তারা প্রেসিডেন্টকে বলতে বলেন যে তিনি অক্ষত আছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট কিছু বলতে অস্বীকার করেন। ভিডিওতে অবশ্য প্রেসিডেন্ট কোন্ডেকে সুস্থ, স্বাভাবিক এবং অক্ষতই দেখা গেছে।
এই ভিডিওটি ছাড়া অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট কোন্ডের অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে আর কিছুই এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
ক্ষমতা দখলের আগ পর্যন্ত কর্ণেল মামাদি দুমবোয়ার পরিচয় সেভাবে কেউ জানতনা। আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক সামরিক অভিজ্ঞতাই তাকে নিজ বাহিনীতে ব্যাপক উত্থানে সহায়তা করেছে।
কর্ণেল দুমবোয়া ফ্রান্সে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি ফরাসি সেনাবাহিনীতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দুমবোয়া তার গত ১৫ বছরের সামরিক জীবনে আফগানিস্তান, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইসরায়েল, ব্রিটেন, সাইপ্রাস ও গিনিতে বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।