নভেল করোনা ভাইরাসের তান্ডবে যখন একের পর এক ব্যবসা ও পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন কারও কারও জন্য তা বয়ে আনছে আশীর্বাদ। বিশেষত ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবাগুলোর জন্য।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বজুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় জারি করা হয়েছে লকডাউন। যার জেরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেননা সেসব এলাকার বাসিন্দারা। ঘরবন্দী মানুষ বাধ্য হয়ে সময় কাটাচ্ছে ইন্টারনেটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হওয়ার সাথে সাথে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, রিয়েলিটি শো দেখেও লকডাউনের দিনগুলো পার করছেন তারা।
আর এতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অনলাইন ভিত্তিক বিনোদন প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ব্যবসার পরিধি। পুরনো গ্রাহকরা যেমন আরও বেশি করে উপভোগ করছেন তাদের অনুষ্ঠান, তেমনি বিপুল সংখ্যক নতুন গ্রাহকও যুক্ত হচ্ছেন প্রতিদিন।
বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইন বিনোদন সংস্থা নেটফ্লিক্সে করোনা ভাইরাসের কল্যাণে এবছরের প্রথম তিন মাসে এরকম নতুন গ্রাহক নিবন্ধিত হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ। সংখ্যাটি গতবছরের শেষের তিন মাসের তুলনায় দ্বিগুণ!
অবশ্য চিত্রের পুরোটাও নেটফ্লিক্সের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। করোনার ধাক্কায় বিশ্বের বহু দেশের অর্থনীতি এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সামনে তা আরও মারাত্মক আকার নেবে বলে পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর। ফলস্বরূপ মুদ্রার মান কমে যাচ্ছে অনেক দেশেরই, ভবিষ্যৎে কমবে আরও। ফলে গ্রাহক বাড়লেও আর্থিক লাভের হার সেই অনুপাতে বাড়ছেনা নেটফ্লিক্সের। তাদের নতুন করে বাড়া গ্রাহকদের সিংহভাগই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের।
নেটফিক্স আরও জানাচ্ছে, করোনার জেরে সারা পৃথিবীতেই শ্যুটিংসহ অনুষ্ঠান নির্মাণ বন্ধ থাকায় তারা গ্রাহকদের বিনোদনের নতুন উপাদান সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের হাতে নতুন যা সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ রয়েছে তা দিয়ে তারা বড়জোর জুন মাস পর্যন্ত চালাতে পারবেন। এরপর তাদেরকে পুরনো অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ওপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে। দ্রুতই নতুন অনুষ্ঠানে ফিরতে না পারলে শুধু পুরনো সিনেমা আর সিরিজ দিয়ে কতদিন দর্শকদের তুষ্ট রাখা যাবে তা চিন্তা বাড়াচ্ছে নেটফ্লিক্সের।
তবে সেসব ভবিষ্যৎের ভাবনা। এই মূহুর্তে নিজেদের সাম্প্রতিককালের সেরা সময় উপভোগ করছে নেটফ্লিক্স। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম এবছর ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারীদের ওপর চাপ কমাতে নেটফ্লিক্স গত মাসে ঘোষণা করে তাদের ভিডিওর কারিগরি মান ইউরোপ অঞ্চলে কিছুটা কমিয়ে দেওয়ার। এছাড়া পরিবর্তিত চাহিদা মেটাতে ২,০০০ অতিরিক্ত কর্মীও নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে বছরের প্রথম তিন মাসে ১ কোটি ৬০ লাখ নতুন গ্রাহক পাওয়ার পর আগামী তিন মাসে অর্থাৎ জুনের শেষ নাগাদ আরও অন্তত ৭৫ লাখ নতুন নিবন্ধনের আশা করছে নেটফ্লিক্স। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই তাদের শেয়ারের নতুন বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো লকডাউন প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করলে নেটফ্লিক্সের শেয়ারের দামও এক ধাক্কায় অনেকটা পড়ে যেতে পারে।
নেটফ্লিক্সে গত তিন মাসে নতুন নিবন্ধন করা ১ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখই ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের। ২৩ লাখ গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সারাবিশ্বে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি ২০ লাখ।
করোনা পরিস্থিতির সুবাদে নেটফ্লিক্সের আয় এই মূহুর্তে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যা গতবছরের এই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। আর গতবছরের প্রথম তিন মাসে তাদের নীট মুনাফা যেখানে ছিল ৩৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা এবছরের প্রথম তিন মাসে দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৭০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।