আরও পাচ বছরের জন্য এলিজি প্রাসাদে থাকার অধিকার আদায় করে নিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানূয়েল ম্যাক্রো।
গতকাল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিদ্বন্দী ম্যারি লে পেনকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ব্যবধানে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন ইমানূয়েল ম্যাক্রো। আর এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথম কোন প্রেসিডেন্ট পরপর দু’বার নির্বাচিত হতে সমর্থ হলেন।
প্রাপ্ত ভোট গণনা শেষে দেখা যাচ্ছে, ম্যাক্রো পেয়েছেন মোট ভোটের ৫৮.৫৫ শতাংশ আর ডানপন্থী ম্যারি লে পেন ৪১.৫ শতাংশ।
২০১৭ সালের আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফাতেও মুখোমুখি হয়েছিলেন ম্যাক্রো ও লে পেন। সেবার প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানে লে পেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ইমানূয়েল ম্যাক্রো।
এবারের নির্বাচনের সব জনমত জরিপেও ইমানূয়েল ম্যাক্রোকে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে দেখানো হলেও ধারণা করা হয়েছিল লে পেনের সাথে তার জয়ের ব্যবধান খুব বেশি হবেনা। কাছাকাছি, এমনকি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরও ইঙ্গিত দিয়েছিল কয়েকটি জরিপ। পাচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ম্যাক্রোর বিপক্ষে স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা এবং ফরাসি সমাজে কট্টরপন্থী লে পেনের গ্রহণযোগ্যতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটা মনে করা হয়েছিল।
কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, ম্যারি লে পেনের তুলনায় ১৭ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো। তার ভোট গতবারের চেয়ে কমলেও ম্যারি লে পেনের মত শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দীর বিরুদ্ধে ১৭ শতাংশ ব্যবধান গড়তে পারাটা ইমানূয়েল ম্যাক্রোর জন্য যথেষ্ঠই তাৎপর্যপূর্ণ।
২০১৭ সালের নির্বাচনে ইমানূয়েল ম্যাক্রো পেয়েছিলেন ৬৬ শতাংশ ভোট। বিপরীতে ম্যারি লে পেনের ভাগ্যে জুটেছিল ৩৪ শতাংশ। ম্যাক্রো প্রেসিডেন্ট পদে সেবারই প্রথম প্রতিদ্বন্দীতা করলেও লে পেনের জন্য ছিল দ্বিতীয়বার। এর আগে ২০১২ সালের নির্বাচনেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন তিনি, কিন্তু প্রথম দফাতেই বাদ পড়ে যান।
এবারের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হবার স্বপ্ন আরও একবার ভেঙে গেলেও ম্যারি লে পেনের প্রতি জনসমর্থন গতবারের ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে এবার হয়েছে ৪১ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট পদে নিজের তিনবারের প্রতিদ্বন্দিতায় ম্যারি লে পেন যেমন এবারই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন, তেমনি তার কট্টর ডানপন্থী দল ‘ন্যাশনাল র্যালি’ এর ইতিহাসেও কোন প্রার্থীর সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়ার রেকর্ড এটি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুননির্বাচিত হওয়ার পর প্যারিসের ঐতিহাসিক আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে স্ত্রী ব্রিজিটকে নিয়ে উপস্থিত হন ইমানূয়েল ম্যাক্রো। সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ম্যাক্রো বলেন, নির্বাচন শেষ হয়েছে, তাই এখন আমি আবার ফ্রান্সের ‘সকল নাগরিকের প্রেসিডেন্ট’। ম্যাক্রো বলেন, ক্ষোভ থেকে বা ভুল বুঝে যারা রক্ষণশীলদের ভোট দিয়েছেন, তাদের সমর্থন ফিরে পাওয়াও আমার দায়িত্ব।
অন্যদিকে পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে ম্যারি লে পেন বলেছেন, যে রেকর্ড পরিমান ভোট তিনি ও তার দল এবারের নির্বাচনে পেয়েছেন, তা এক অর্থে নির্বাচনে বিজয়ই।
ইমানূয়েল ম্যাক্রোর বিজয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ইউরোপ। জাতীয়তাবাদী ম্যারি লে পেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ব্রেক্সিটের আদলে ব্রিটেনের মত ফ্রান্সকেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে নেওয়ার উদ্যোগ নিতেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ম্যাক্রোর বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি, যিনি প্রকাশ্যেই ফ্রান্সের নাগরিকদের ইমানূয়েল ম্যাক্রোকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন, অভিনন্দন বার্তায় ম্যাক্রোকে ‘প্রকৃত বন্ধু’ উল্লেখ করে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ এক ইউরোপ দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের এবারের দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭২ শতাংশ। ১৯৬৯ সালের পর দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের এটিই ভোট পড়ার সর্বনিম্ন হার। ভোটগ্রহণের দিনটি ছুটির দিন হওয়ায় ভোট কম পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।