সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ রাষ্ট্রনেতা মিখাইল গর্বাচভ আর নেই। ৯১ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন এক সময়ের বহুল আলোচিত এই রাজনীতিবিদ।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় রাজতন্ত্রের পতনের পাঁচ বছর পর ১৯২২ সালে দেশটিতে প্রতিষ্ঠীত হয় সমাজতন্ত্র। শাসনব্যবস্থার সাথে দেশেরও নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
১৯৯১ সালে সেখানে সমাজতন্ত্রের পতনের আগ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের দীর্ঘ সাত দশকের ইতিহাসে দেশটি শাসন করেছেন ভ্লাদিমির লেনিন, জোসেফ স্তালিন, নিকিতা ক্রুশ্চেভসহ মোট আটজন নেতা। মিখাইল গর্বাচভ ছিলেন তাদের সর্বশেষ।
সমাজতন্ত্রের প্রতি পূর্বতনদের মত কট্টর অনুগত ছিলেননা গর্বাচভ। বরং ছিলেন মুক্তমনা এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের সমর্থক। ৮০’র দশকের শেষে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অতিষ্ঠ সোভিয়েত নাগরিকেরা যখন পথে নামেন, তখন তাদের প্রতি নমনীয়ই ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভ।
মূলত তার নেতৃত্বেই সাত দশকের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে রাশিয়ায়। প্রতিষ্ঠীত হয় গণতন্ত্র। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অবসান হয় স্নায়ুযুদ্ধের।
পশ্চিমা বিশ্বের সাথে উত্তেজনা প্রশমনে তার উদ্যোগের জন্য ১৯৯০ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত হন মিখাইল গর্বাচভ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং স্নায়ুযুদ্ধের বিদায়ে তার ভূমিকার কারণে সারাবিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ছিলেন মিখাইল গর্বাচভ। আবার একই কারণে নিজ দেশ রাশিয়ার অনেকের চোখেই তিনি ছিলেন খলনায়ক।
দীর্ঘ রোগভোগের পর আজ মস্কোর একটি হাসপাতালে মারা যান গর্বাচভ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রায় নিয়মিতই তার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
প্রয়াত মিখাইল গর্বাচভকে মস্কোর নোভোডেভিচি সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থ করা হবে। এই সমাধিক্ষেত্রে রাশিয়ার বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ রাষ্ট্রনেতা মিখাইল গর্বাচভের শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পন্ন হবে কিনা সেব্যাপারে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, জীবদ্দশায় রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক ছিলেন মিখাইল গর্বাচভ।
অবশ্য গর্বাচভের মৃত্যুতে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, রাশিয়ার ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে ব্যাপক প্রভাব রেখেছিলেন মিখাইল গর্বাচভ। (ক্ষমতায় থাকাকালে) তিনি গভীরভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে সংস্কার জরুরি। এবং সেইমত সংকট সমাধানের নিজস্ব ভাবনা তিনি তুলে ধরেছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার শোকবার্তায় গর্বাচভকে একজন ‘বিরল নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার সময়ও তিনি স্বপ্ন দেখতে পারতেন যে ভবিষ্যৎ অন্যরকমভাবেও নির্মাণ করা সম্ভব।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতারেস তার বার্তায় বলেছেন, মিখাইল গর্বাচভ ছিলেন এক এবং অদ্বিতীয় একজন রাষ্ট্রনায়ক। তার মৃত্যুতে বিশ্ব এক মহান নেতা এবং শান্তির স্বপক্ষের দূতকে হারালো।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক শোকবার্তায় মিখাইল গর্বাচভের সাহস ও একাগ্রতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, ইতিহাস মিখাইল গর্বাচভকে মনে রাখবে এমন একজন মানুষ হিসেবে, যিনি রাশিয়ার জনগণের ভালোর জন্য যা করবার প্রয়োজন ছিল, সেই ঐতিহাসিক সংস্কার পদক্ষেপগুলোর সূচনা করেছিলেন।