বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনকে সংযুক্ত করতে যাচ্ছেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের এই সংযুক্তিতে সময় লাগতে পারে একবছর।
অবশ্য এই সংযুক্তির অর্থ এই নয় যে তিনটি অ্যাপ একসাথে মিশে একটি অ্যাপে পরিণত হবে। সবক’টি অ্যাপই আগের মতই থাকবে, তারা একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত হবে মাত্র।
উদাহরণস্বরুপ, কেউ যদি ফেসবুকে লগইন করেন, তাহলে তাকে ইন্সটাগ্রাম বা হোয়াটঅ্যাপ ব্যবহারের জন্য আলাদা করে লগইন করতে হবেনা। ফেসবুকে লগইন করার সময়ই তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাকি দু’টো অ্যাপেও লগডইন হয়ে যাবেন।
এটি নিঃসন্দেহে হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম ও মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীদেরকে আরও বেশি করে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। পরিসংখ্যানমতে, সারা পৃথিবীতে এই তিনটি অ্যাপের মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২.৬ মিলিয়নের মত।
মার্ক জুকারবার্গের পরিকল্পনা এখনও রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি সম্পন্ন করতে এই বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরু নাগাদ সময় লেগে যেতে পারে।
এক বিবৃতিতে ফেসবুক বলেছে, “আমরা মেসেজিংয়ের সেরা অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করতে চাই। আর সাধারণ মানুষও মেসেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা করে দ্রুততা, নির্ভরযোগ্যতা এবং গোপনীয়তা। আমরা আমাদের মেসেজিং পণ্যগুলোকে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের আওতায় আনার কাজ করছি।”
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন হল এমন একধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা, যেখানে শুধুমাত্র মেসেজিংয়ে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরাই একজন আরেকজনের কাছে পাঠানো বার্তা দেখতে পারবেন, বাইরের কেউ নয়। ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিতের স্বার্থে বর্তমান সময়ে ফেসবুকসহ প্রায় সব মেসেজিং প্লাটফর্মই নিজেদের সেবাগুলোকে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের আওতায় নিয়ে আসছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মার্ক জুকারবার্গের এই উদ্যোগকে দেখছেন ফেসবুকের অধীনে থাকা এই তিনটি অ্যাপের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে। উল্লেখ্য, এই তিনটি মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে একমাত্র মেসেঞ্জার ছিল ফেসবুকের নিজস্ব পণ্য। হোয়াটসঅ্যাপ ও ইন্সটাগ্রাম যাত্রা শুরু করেছিল স্বতন্ত্রভাবে এবং সময়ের সাথে সাথে অর্জন করেছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিনে নেয় বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা এই অ্যাপ দু’টোকে।
যদিও মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রাম প্রায় কাছাকাছি ধরনের সেবা দেয় গ্রাহকদের, কিন্তু শুরু থেকেই এগুলোর প্রত্যেকেই নিজেদের স্বতন্ত্র্য উপস্থিতি তৈরি করতে পেরেছে প্রযুক্তি বাজারে। সেই কারণেই মার্ক জুকারবার্গ অ্যাপগুলোকে কিনে নিলেও সেগুলোকে কখনও একীভূত করার কথা ভাবেননি। কিন্তু এখন তিনি মনে করছেন, একীভূত না হলেও অ্যাপগুলোকে অন্তত নিজেদের মধ্যে সংযুক্ত করে রাখা প্রয়োজন, যাতে এই তিন অ্যাপের কয়েক মিলিয়ন ব্যবহারকারী ফেসবুকের ছাতার নিচেই থাকে, প্রকারান্তরে দূরে থাকে ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দী গুগল ও অ্যাপলের থেকে!