অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে কানাডায় জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে এখনও প্রায় দু’বছর বাকি রয়েছে।
আগাম নির্বাচনের আকস্মিক এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল যখন কোভিড-১৯ এর চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানতে যাচ্ছে কানাডায়। মহামারির এর আগের তিনটি ঢেউ বেশ ভালোভাবেই সামলে নিতে পেরেছে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল দলের সরকার।
ধারণা করা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এই সাফল্যকে পুজি করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নির্বাচনের মাধ্যমে আরও সংহত করে নিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত কানাডার সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি এককভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেলেও সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়তে হয় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর দলকে।
এবারের নির্বাচনে তাই লিবারেল পার্টির লক্ষ্য থাকবে নিজেদের আসন বাড়িয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা। যেন সরকার গড়তে ও পরিচালনা করতে অন্য কোন দলের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয় তাদের।
রবিবারই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কানাডার গভর্নর জেনারেলের সাথে সাক্ষাৎ করে বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ কানাডারও আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তার প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর জেনারেলই দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর নতুন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কানাডার এবারের নির্বাচনে অবধারিতভাবে মূল ইস্যু হতে যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে দেশটির জনগণের মধ্যে।
কানাডায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৫,০০০ এর বেশি মানুষ। সাধারণভাবে অনেক মনে হলেও সংখ্যাটি প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বহু দেশের তুলনায় যথেষ্ঠই কম।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে কার্পণ্য করেননি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তবে তা করতে গিয়ে রেকর্ড দেনারও মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারকে।
এছাড়া ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধের মত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার অভিযোগ উঠেছিল সরকারের বিরুদ্ধে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর বেশ কিছু বৃদ্ধাশ্রমে এমনকি সেনাবাহিনীও পাঠাতে হয়েছিল আক্রান্ত প্রবীণদের সহযোগিতার জন্য।
নাগরিকদের টিকাকরণে ধীরগতিও সমালোচনার মুখে ফেলে জাস্টিন ট্রুডোকে। এছাড়া টিকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনেও সরকার প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল।
তবে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে একসময় পরিস্থিতি সামলেও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। টিকা দেওয়ার হারের নিরিখে এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ওপরের দেশগুলোর তালিকায় অবস্থান করছে কানাডা। সংক্রমণের বর্তমান হারও অনেকটা স্বস্তিদায়ক। করোনার কারণে থমকে যাওয়া দেশের অর্থনীতিও ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াচ্ছে।
নির্বাচনী ময়দানে ট্রুডোর বিপক্ষে থাকছেন কারা?
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি কানাডার রাজনীতিতে মধ্যপন্থী দল হিসেবে পরিচিত।
নির্বাচনে দলটির মূল প্রতিদ্বন্দীতা হবে ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টির সাথে। আগের নির্বাচনে সামাজিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত ইস্যুগুলোতে ভোটারদের মন জয় করতে বেগ পেতে হয়েছিল দলটিকে। কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন সংসদের প্রধান বিরোধী দলনেতা ৪৮ বছর বয়সী এরিন ও’টুল। ভোটারদের কাছে খুব একটা পরিচিত মুখ নন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া এই নেতা।
বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জোরালো অবস্থান রয়েছে ৪২ বছরের জগমিৎ সিংয়ের নেতৃত্বাধীন এনডিপি দলের। শিখ বংশোদ্ভূত এই নেতার জনপ্রিয়তা ২০১৯ এর সর্বশেষ নির্বাচনের চেয়ে এবার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আভাস দিচ্ছে জনমত জরিপগুলো।
এছাড়া কিউবেক প্রদেশের স্বাধীনতাপন্থী দল ব্লক কিউবেকোয়াও এবারের নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে থাকছে। দলটি কানাডার অন্যত্র প্রতিদ্বন্দিতা না করলেও নিজ প্রদেশের আসনগুলোতে ব্যাপক প্রভাব থাকায় দেশটির নির্বাচনী সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে এই দলটির।