ইসরায়েলের অতি সুরক্ষিত এক কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দি। অভূতপূর্ব এই ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ইসরায়েলের গিলবোয়া কারাগারে। ঐ ছয় বন্দি নিজেদের কারাকক্ষের মেঝে খুড়ে প্রথমে কারাগারের ভূগর্ভে নেমে যায়। এরপর কারাগারের প্রাচীর বরাবর আরও খুড়তে খুড়তে একেবারে বাইরে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
কারাগার থেকে বেরিয়ে পাশের ফসলের ক্ষেত দিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় স্থানীয় কৃষকরা তাদের দেখে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনীকে খবর দেয়। তখনই কারা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি।
ঐ ছয় বন্দিই ফিলিস্তিনি জিহাদি সংগঠনের কর্মী। এদের একজন আল আকসা মার্টার্স ব্রিগেড ও বাকি পাচজন ইসলামিক জিহাদ গ্রুপের সদস্য।
ইসরায়েলের কারা দপ্তরের এক কর্মকর্তা আজকের এই ঘটনাকে তাদের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতায় গুরুতর ঘাটতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো ঘটনাটিকে বর্ণনা করছে ‘বীরোচিত’ হিসেবে।
ইসরায়েলের গিলবোয়া কারাগারটি এতই সুরক্ষিত যে এটিকে ‘দ্য সেইফ’ (সিন্দুক) নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
পালিয়ে যাওয়া বন্দিরা প্রথমে তাদের কক্ষের বাথরুমের মেঝেতে গর্ত করতে শুরু করে। একাজে তারা ব্যবহার করে একটি জং ধরা চামচ। স্থানীয় এক পত্রিকা বলছে, চামচটি তারা তাদের কক্ষের একটি পোস্টারের পেছনে লুকিয়ে রাখত।
বেশ কিছুদিন ধরে গর্ত খোড়ার পর তারা ভূগর্ভের একটি ফাকা স্থানে পৌছায়। সেখান থেকে তারা দিক আন্দাজ করে কারাগারের প্রাচীর বরাবর চলে যায়। সেখানে টানেল খুড়ে তারা বাইরের একটি রাস্তায় উঠে পড়ে।
আবার ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে তারা দ্রুত পাশের কৃষিজমির ওপর দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এসময়ই স্থানীয় কৃষকরা তাদের দেখে ফেলে। তাদের এভাবে দৌড়তে দেখে কৃষকদের সন্দেহ হলে তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে বিষয়টি জানায়।
নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে বিষয়টি গিলবোয়া কারা কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তারা তাদের বন্দিদের গণনা শুরু করে। তখনই জানা যায়, ছয় বন্দি কারাগারে নেই। আরও তল্লাশির পর বাথরুমের মেঝে খুড়ে বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা দপ্তর বলছে, বাইরে বেরিয়ে ঐ ছয় বন্দি চোরাই পথে পাওয়া একটি মোবাইল ফোন দিয়ে নিজেদের সতীর্থদের সাথে যোগাযোগ করেছিল। এরপর একটি গাড়ি এসে তাদের নিয়ে যায়।
পালিয়ে যাওয়া ছয় বন্দির একজন হলেন জাকারিয়া যুবেইদি। তিনি আল আকসা মার্টার্স ব্রিগেডের পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের সাবেক কমান্ডার। ২০১৯ সালে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলার একাধিক ঘটনায় যুবেইদিকে আটক করা হয়েছিল। তার মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে।
ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর সদস্য বাকি পাচজনের মধ্যে চারজনই যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত। ইসরায়েলীয় নাগরিকদের হত্যার একাধিক ঘটনায় হামলাকারী বা পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাদের এই দন্ড দেওয়া হয়েছিল। বাকি অন্য সদস্যকে প্রায় দু’বছর ধরে আনুষ্ঠানিক কোন অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখা হয়েছিল।
গিলবোয়া কারাগার থেকে বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই তাদের খুজে বের করতে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনীও এই তল্লাশিতে যোগ দিয়েছে। ঐ ছয় বন্দি যাতে কারাগার থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পশ্চিম তীর বা জর্ডানে চলে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্তমুখী সকল সড়কে কড়া পাহারা বসানো হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট আজকের ঘটনা নিয়ে নিরাপত্তামন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন। তিনি প্রয়োজনে সীমান্তের দু’পাড়েই তৎপরতা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের আটক করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
অন্যদিকে ইসলামিক জিহাদ এই ঘটনাকে ‘বীরোচিত’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কাপিয়ে দেবে। আর হামাস মুখপাত্র বলেছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে, কারাগারে থাকা আমাদের সাহসী যোদ্ধাদের মনোবল এবং লক্ষ্যকে শত্রুরা কখনোই পরাজিত করতে পারবেনা।