তালেবানদের ক্ষমতা দখলের মুখে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি জনগণের কাছে তার দেশত্যাগের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা এই নেতা এক টুইট বার্তায় এই ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, কাবুল ত্যাগ করাটা তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। ঘটনাক্রমের শেষটা ভিন্নভাবে করতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
আফিগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহারের দিন ঘোষণা হতেই দেশটির একের পর এক প্রদেশ দখল করে নিতে শুরু করে স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী তালেবান গোষ্ঠী। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কার্যত বিনা বাধায় তারা পৌছে যায় রাজধানী কাবুলেও। ১৫ আগস্ট প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশের মধ্য দিয়ে তালেবানদের আফগানিস্তান দখল নিশ্চিত হয়ে যায়।
এর কয়েক ঘন্টা আগেই গোপনে শুধু প্রাসাদ নয়, আফগানিস্তান ছেড়েই চলে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি প্রতিবেশী দুই দেশ উজবেকিস্তান অথবা তাজিকিস্তানের কোনো একটিতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে শোনা যেতে থাকে।
তবে শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে তারা মানবিক কারণে সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও তার পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে।
আজকের টুইট বার্তায় দেশ ছাড়ার সময় প্রায় ১৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে তাও অস্বীকার করেন সাবেক এই আফগান প্রেসিডেন্ট।
আশরাফ ঘানি দাবি করেছেন, আফগানিস্তান জুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশত্যাগ করা ছাড়া তার সামনে আর কোন বিকল্প ছিলনা। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা তাকে বুঝিয়েছিল যে তিনি আফগানিস্তানে থেকে গেলে কাবুলের রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়বে ৯০’র দশকে গৃহযুদ্ধের সময়কার মত। তিনি বলেন, কাবুল ও এর ষাট লক্ষ বাসিন্দাকে (সংঘাত থেকে) রক্ষা করতেই তিনি দেশ ছেড়ে চলে এসেছেন।
ঘানি দাবি করেন, আফগানিস্তানকে একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ ও স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিগত ২০ বছর উৎসর্গ করেছেন।
এর আগে গত ১৮ আগস্টও ফেসবুক লাইভে এসে আশরাফ ঘানি দাবি করেছিলেন যে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা তাকে আফগানিস্তান ছাড়তে ‘বাধ্য’ করেছিলেন কারণ তালেবানদের হাতে আটক হলে তার মৃত্যুর ঝুকি ছিল। নিজ দাবির স্বপক্ষে ঘানি জানান, ১৫ আগস্ট প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলের পর তালেবানরা নাকি এর কক্ষগুলোতে তন্নতন্ন করে তার খোজ চালিয়েছিল!
কে আশরাফ ঘানি?
সাবেক কূটনীতিক আশরাফ ঘানির পেশাগত জীবনের একটা বড় অংশই কেটেছে আফগানিস্তানের বাইরে। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থায় কাজের সূত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর হাতে তালেবান সরকারের পতনের পর আফগানিস্তানের সংসদ ‘লয়া জিরগা’-র নির্বাচনে অংশ নেন ঘানি। সেটিই ছিল তার প্রথম সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ।
হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বাধীন তালেবান পরবর্তী প্রথম সরকারে ২০০২ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আশরাফ ঘানি। তবে পরবর্তী সময়ে কারজাইয়ের সাথে দূরত্ব তৈরি হয় তার।
২০০৯ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথমবারের মত অংশ নেন ঘানি। তবে সাফল্য পাননি, ভোটের হিসেবে হন চতুর্থ। সেই নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন হামিদ কারজাই।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট পদে দাড়ান আশরাফ ঘানি। এরই মধ্যে দু’বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এই নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দীতা করতে পারেননি হামিদ কারজাই। ফলে নির্বাচনে আশরাফ ঘানির মূল প্রতিপক্ষ হন কারজাই মন্ত্রীসভায় তার একসময়ের সতীর্থ আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ।
তবে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে স্থবিরতা দেখা দেয় আফগানিস্তানে। কয়েকমাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে মার্কিন মধ্যস্থতায় আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সম্মতিতে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন আশরাফ ঘানি।
সেই থেকে গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আশরাফ ঘানি। দূর্নীতি, অদক্ষতা, নিরাপত্তার ঘাটতিসহ নানা ইস্যুতে সমালোচনার মুখে ছিল তার সরকার। অবশেষে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর বিদায় ও ক্ষমতায় তালেবানদের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেষ হল আশরাফ ঘানির বিতর্কিত শাসনামল।