নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার নামে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ২০তম বার্ষিকী আজ। গভীর শ্রদ্ধায় সেদিনের ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেছে তাদের স্বজন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা।
দু’দশক আগের এই দিনে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে একযোগে হামলা চালায় নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভেনিয়ায়। তাদের টার্গেট ছিল টুইন টাওয়ার, পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউস ও ক্যাপিটল হিলের মধ্যে কোন একটি।
প্রথম দু’টি স্থাপনায় আঘাত হানতে সফল হলেও বিমানে থাকা যাত্রী ও ক্রু’দের প্রতিরোধের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় তাদের তৃতীয় টার্গেটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারের জোড়া ভবনে হামলাটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। মাত্র ১৭ মিনিটের ব্যবধানে দু’টি যাত্রীবাহী বিমান আছড়ে পরে দুই টাওয়ারের গায়ে।
এর প্রায় দেড় ঘন্টা পর টাওয়ার দু’টি হঠাৎই ধসে পড়তে শুরু করে একসময় পুরোপুরি মাটির সাথে মিশে যায়।
কাছাকাছি সময় আরেকটি বিমান আছড়ে পড়ে ভার্জিনিয়ায় মার্কিন সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগনের ওপর। কিছুক্ষণ পর খবর পাওয়া যায়, চতুর্থ আরেকটি বিমান ভেঙ্গে পড়েছে পেনসিনভেনিয়ার একটি ক্ষেতে। পরবর্তীতে তদন্তে জানা যায়, ঐ বিমানটি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস অথবা মার্কিন সংসদ ক্যাপিটল হিলে একই কায়দায় আঘাত করার পরিকল্পনা ছিল হামলাকারীদের। কিন্তু বিমানের যাত্রী ও ক্রুরা বিমান ছিনতাইকারীদের ওপর চড়াও হলে তারা বিমানটির হারিয়ে ফেলে এবং লক্ষ্যে পৌছানোর আগেই ভূপাতিত হয়।
ঐ দিনের অভূতপূর্ব সেই হামলায় সব মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৯৭৭ জন সাধারণ নাগরিক। ১৯ হামলাকারীর সকলেও মারা গিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তীতে বদলে দিয়েছিল ভূরাজনীতির অনেক হিসাব নিকাশ।
সেই ঘটনার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে নানা স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আজ।
দিনের মূল কর্মসূচিটি ছিল নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের হামলাস্থলে, যেটি এখন গ্রাউন্ড জিরো নামে পরিচিত। এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে, ২০০১ সালে ঠিক যে সময়টায় প্রথম বিমানটি আঘাত হেনেছিল টুইন টাওয়ারের উত্তরের ভবনটিতে। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে আরও চারবার নীরবতা পালন করা হয় বাকি তিনটি বিমানের আঘাত করা এবং টুইন টাওয়ারের ভবনগুলো ধসে পড়ার সময়গুলোতে।
এই স্মরণ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে অংশ নেন সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামাও। তাদের সাথে ছিলেন বর্তমান ও সাবেক ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, হিলারি ক্লিনটন ও মিশেল ওবামা।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিউইয়র্ক ছাড়াও ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার অন্য দুই স্থান পেনসিলভানিয়া ও ভার্জিনিয়াও সফর করেন।
আজকের দিনটির প্রাক্কালে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেদিনের ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
পেনসিলভানিয়ার শাঙ্কসভিলেতে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলাস্থলে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ।
আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় কোন স্মরণ অনু্ষ্ঠানে যোগ না দিলেও আগের দিন এক ভিডিও বার্তায় নিহতদের স্মরণ করেন। তিনি আফগানিস্তান থেকে সাম্প্রতিক সেনা প্রত্যাহারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বার্তায় বলেন, যারা আমাদের ক্ষতি করেছিল তাদের বিরুদ্ধে চালানো যুদ্ধের গত সপ্তাহের এমন পরিণতি দুঃখজনক।
আনুষ্ঠানিক কোন আয়োজনে যোগ না দিলেও নিউইয়র্কে নিজ ভবন ট্রাম্প টাওয়ারের অদূরে ম্যানহাটন পুলিশ স্টেশন পরিদর্শন করে সেদিনের ঘটনায় নিহত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আজকের দিনের অন্যান্য আয়োজনগুলোর মধ্যে ছিল নিউইয়র্কের দমকল কার্যালয়ে একটি স্মারক দেয়াল উন্মোচন। তামা দিয়ে তৈরি ৫৬ ফুটের এই দেয়ালটি সেদিনের হামলার পর দূর্গতদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিহত হওয়া ৩৪৩ জন দমকল কর্মীর স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনায় জরুরি পরিষেবার সব মিলিয়ে ৪৪১ জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এছাড়া মার্কিন সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগনের হামলাস্থলে নিহতদের স্মরণে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ প্রার্থনা সভার। পেন্টাগন ভবনের ঠিক যেখানটায় সেদিন আঘাত হেনেছিল সন্ত্রাসীদের চালানো বিমান, সেখানে নিহতদের স্মরণে নির্মাণ করা আছে একটি উপাসনালয়।