অবশেষে আফগান নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিল তালেবান সরকার। তবে পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে এবং কিছু পোশাক বিধি মেনে তারা এই সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন আফগান শিক্ষামন্ত্রী।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পড়ানো হবে আর কি হবেনা তাও এখন থেকে তদারকি করবে তালেবান প্রশাসন।
অতীতে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, এমনকি স্কুল, কলেজ পর্যায়েও নারীদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন তালেবান সরকার।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর হাতে তালেবানদের পতনের পর গত ২০ বছর শিক্ষার সকল পর্যায়ে অংশগ্রহণের অবারিত সুযোগ পেয়ে এসেছিলেন আফগান নারীরা। যার ফলশ্রুতিতে চাকরি, ব্যবসাসহ সমাজের সকল স্তরে শিক্ষিত আফগান নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত।
দু’দশক পর আফগানিস্তানের ভাগ্য আবারও তালেবানদের হাতে চলে যাওয়ায় নারীরা তাদের শিক্ষার অধিকার ফের একবার হারিয়ে ফেলবেন কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত আফগান শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি জানিয়ে দিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নারীরাও পাবেন। তবে নারী ও পুরুষ একসাথে পড়াশোনা করতে পারবেনা এবং নারীদেরকে ‘শরিয়াসম্মত’ পোশাক পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দিন ঘোষণার পর থেকেই দেশটির একের পর এক প্রদেশ দখল করে নিতে শুরু করে স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী তালেবান গোষ্ঠী। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আফগানিস্তানের প্রায় পুরোটা নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসে তারা। আর ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশের মধ্য নিয়ে ক্ষমতা দখল নিশ্চিত হয়ে যায় তালেবানদের।
তবে দু’দশক আগের তালেবানদের চেয়ে এবারের তালেবানরা যে অনেকটাই আলাদা এবং আধুনিক, শুরু থেকেই তা দেখানোর চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে নারীশিক্ষার ব্যাপারে নিজেদের অনাপত্তির কথা আগেই জানিয়েছিল তালেবান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তারা নারীদের দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে গিয়েছিল, যা আজকের ঘোষণায় অনেকটা দূর হল।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে তালেবানদের সর্বশেষ এই অবস্থানকে অনেকেই ইতবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না। কারণ আফগানিস্থানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিকাঠামো এমনিতেই যথেষ্ঠ দূর্বল। সেখানে নারীদের পাঠদানের জন্য আলাদা কক্ষ ও আলাদা শিক্ষকের ব্যবস্থা করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দিহান তারা। আর তা করা না গেলে শেষমেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগটাই আর পাবেন না নারীরা।
এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আফগান শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি বলেন, আলাদা শ্রেণিকক্ষের বিষয়টি নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব সক্ষমতার ওপর। আর পর্যাপ্ত নারী শিক্ষক না থাকলে পুরুষ শিক্ষকদের দিয়ে পর্দার আড়াল থেকে পাঠদান করানো যেতে পারে। এছাড়া প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েও কাজটি করা যেতে পারে।
পাঠ্যসূচি নির্ধারণের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী হাক্কানি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোন বিষয় পড়ানো হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আফগানিস্তানের জাতীয় ও ঐতিহাসিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হবে। তবে তা যেন অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত যুগোপযোগীও হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের পোশাকের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ছাত্রীদের অবশ্যই হিজাব পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহে তালেবানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে দেশের একাধিক শহরে যে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে, তার অনেকেগুলোরই নেতৃত্বে ছিলেন নারীরা। শুরুতে নমনীয় থাকলেও সম্প্রতি বলপ্রয়োগ করে এসব বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে তালেবানদের।
চলতি সপ্তাহে রাজধানী কাবুলের এমনই বিক্ষোভ টিয়ার গ্যাস ও মশলার গুড়া ছিটিয়ে দমন করে তালেবান নিরাপত্তা বাহিনী।