রাশিয়ার সংসদ নির্বাচনে ধারণামতই জয় পেয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া। ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ফলাফলকে এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিরোধীদল এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।
প্রায় সকল ভোট গণনার পর দেখা যাচ্ছে, ইউনাইটেড রাশিয়া মোট ভোটের ৫০ শতাংশের কিছু কম ভোট পেয়েছে। আগের নির্বাচনের চেয়ে দলটির ভোট কিছুটা কমে গিয়েছে। মাত্র ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত প্রায় সকল বিরোধী প্রার্থীকেই এবারের নির্বাচনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে কার্যত শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দিতা ছাড়াই ইউনাইটেড রাশিয়াকে নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
ভোটগ্রহণের সময় ব্যালট বাক্সে একসাথে অনেকগুলো ব্যালট পেপার ভরা থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এছাড়া অনিয়মের আরও অনেক মৌখিক অভিযোগ রাশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
তবে দেশটির কমিশন ব্যাপক আকারে অনিয়ম হওয়ার দাবি অস্বীকার করেছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দল ২০১৬ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার তাদের ভোটের হার কিছুটা কমে হয়েছে ৪৯.৮২ শতাংশ। কার্যকর বিরোধী দলবিহীন দেশটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। গত নির্বাচনের চেয়ে তাদের ভোট বেড়েছে ৬ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিভিন্ন উদ্যোগকে সংসদে ব্যাপকভাবে সমর্থন করতে দেখা যায় এই দলটিকে। তবে এবারের নির্বাচনে তারাও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে।
জীবনযাত্রার মান নিয়ে অসন্তোষ এবং দেশটির শীর্ষস্তরে থাকা রাজনীতিবিদ ও আমলাদের বিরুদ্ধে ওঠা দূর্নীতির অভিযোগের কারণে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড রাশিয়ার সমর্থন আগেরবারের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে বলে মন্তব্য করছে রাশিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
তবে দলটির এখনও মোট ভোটের প্রায় অর্ধেক পাওয়ার কৃতিত্ব তারা দিচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিনকেই। নানা সমালোচনা স্বত্তেও রাশিয়ায় প্রবলভাবে জনপ্রিয় তিনি। পশ্চিমাদের বিপক্ষে দৃড় অবস্থান কিংবা রুশ জাতীয়তাবাদের গৌরবকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার মত বিষয়গুলোর কারণে নিজদেশে তিনি এখনও অপ্রতিদ্বন্দী।
তবে পুতিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দী হয়ে ওঠার যোগ্যতা যাদের রয়েছে, তাদের শুরুতেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার চর্চাটাও দেশটিতে চলে আসছে বহুদিন ধরেই। এদের কাউকে দেশছাড়া করা হয়েছে, কাউকে জেলে ঢোকানো হয়েছে, কাউকে বিষপ্রয়োগে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, আবার কারও পরিণতি হয়েছে মৃত্যু। গুরতর অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে থাকা সাবেক প্রধান বিরোধী দলনেতা আলেক্সাই নাভালনি এমন সব তৎপরতার সর্বশেষ উদাহরণ।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর আলেক্সাই নাভালনির সমর্থকেরা দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক টেলিভিশন ভাষণে তাদের দলের ওপর ‘ভরসা রাখার জন্য’ দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে রাজধানী মস্কোসহ বেশকিছু শহরে প্রথমবারের মত আংশিকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট নেওয়া হয়। তবে এসব মেশিনেও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে।
অনেকগুলো আসনে দেখা গেছে, সাধারণ ব্যালটের গণনায় এগিয়ে থাকা কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীরা ইলেকটনিক ভোটিং মেশিনে পড়া ভোট গণনা শুরু হতেই পিছিয়ে পড়তে থাকেন এবং একসময় পরাজিত হন।
স্বাধীন আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা গোলোস জানিয়েছে, তিন দিন ধরে চলা রাশিয়ার নির্বাচনে তারা ৫,০০০ এর মত অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে। বিপরীতে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, ‘উল্লেখযোগ্য’ অনিয়মের কোন অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে আসেনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রও আলাদা আলাদা পর্যবেক্ষণে রাশিয়ার নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।