তৃতীয়বারের মত কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন জাস্টিন ট্রুডো। মেয়াদ পূরণের দু’বছর আগেই অনেকটা আকস্মিকভাবে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রুডো।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করলেও প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি গতবারের মত এবারও অল্পের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কানাডায় সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনে সংসদের মোট ৩৩৮ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৭০ আসনে জয়লাভ করতে হয় কোন দল বা জোটকে। এবারের নির্বাচনে লিবারেল পার্টি জয় পেয়েছে ১৫৯ আসনে। অর্থাৎ সরকার গড়তে বাকি ১১ আসনের জন্য অন্য কোন দলের ওপর নির্ভর করতে হবে জাস্টিন ট্রুডোকে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়ে আবারও প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসতে চলেছে কনজারভেটিভ পার্টি। তারা জয়লাভ করেছে ১১৯ আসনে।
ভোটগণনা পুরোটা সম্পন্ন হওয়ার অনেক আগেই নিশ্চিত হয়ে যায় জাস্টিন ট্রুডোর একটানা তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা। মন্ট্রিয়লে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ট্রুডো বলে, “ভোটগণনা এখনও বাকি রয়েছে, কিন্তু এরই মধ্যে বোঝা যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ কানাডিয়ান সমৃদ্ধির পক্ষে রায় দিয়েছেন। আপনারা এমন একটি সরকার নির্বাচিত করলেন যেটি আপনাদের জন্য লড়াই করবে এবং আপনাদের সেবা করে যাবে।“
গত দু’বছর ধরে পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় করোনা পরিস্থিতি বেশ ভালভাবেই সামলাতে পেরেছে কানাডা সরকার। বিশেষ করে প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে কানাডায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু দু’টোই ছিল অনেক কম।
করোনার বরাদ্দ ছাড়ে ধীরগতি কিংবা টিকাকরণের শুরুতে স্থবিরতার মত অভিযোগ থাকলেও মহামারি মোকাবেলায় মোটের ওপর প্রশংসিতই হয়েছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার।
মূলত এই অর্জনের ওপর ভরসা করেই মেয়াদের আরো অনেকটা সময় বাকি থাকা স্বত্তেও আগাম নির্বাচনের ঝুকি নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। গত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া ট্রুডো চেয়েছিলেন এবারের নির্বাচনে সেই ঘাটতি পূরণ করে নিতে।
তবে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছিল কানাডার বিরোধীদলগুলো। দেশটি সম্প্রতি করোনার চতুর্থ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচন মানেই বিপুল ব্যয়। করোনার ধাক্কা আর সব দেশের মত কানাডার অর্থনীতির ওপরেও পড়েছে। এমন অবস্থায় আগাম নির্বাচনের পথে হাটা প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ হয়নি বলে দাবি বিরোধীদের।
বাস্তবিকই দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনটি খরচের দিক থেকে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে সাম্প্রতিক এই নির্বাচনে, যা কানাডার ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ।
কিন্তু যে ফলাফল প্রত্যাশা করে করোনার ঝুকি আর বিপুল খরচ মাথায় নিয়ে আগাম নির্বাচনটি ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো, তা অধরাই থেকে গেল তার। জিততে পারলেও গতবারের মত এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অঙ্ক ছুতে পারেনি তার দল। অর্থাৎ আবারও সংখ্যালঘু সরকার চালাতে হবে জাস্টিন ট্রুডোকে।
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এরিন ও’টুল বলেন, “প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও দেশকে আরও বিভক্ত করার মূল্যে কানাডার জনগণ জাস্টিন ট্রুডোকে আবারও একটা সংখ্যালঘু সরকার দিয়ে আগের জায়গায় ফেরত পাঠিয়েছে।“
নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোও মাত্র দুই বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার নির্বাচন করার যৌক্তিকতার জোরালো ব্যাখ্যা জনগণের কাছে দিতে পারেননি।
এবারের নির্বাচনে লিবারেলদের ১৫৯ ও কনজারভেটিভদের ১১৯ আসনের বাইরে বাকি দলগুলোর ফলাফলও অনেকটা আগের নির্বাচনের মতই হয়েছে। কিউবেক প্রদেশের স্বাধীনতাপন্থী দল ব্লক কিউবেকোয়া পেয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ আসন। এছাড়া বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি ২৫ ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ২ আসনে জয়লাভ করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর লিবারেল পার্টিকে বামপন্থী দল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন দেবে।