সুদান সরকার বলছে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে চালানো সামরিক অভ্যুত্থানের একটি চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এর সাথে জড়িত সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিরা দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের অনুগত বলে দাবি করেছে সরকার।
সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদোক এই অভ্যুত্থান চেষ্টার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল নাগাদ অভ্যুত্থানটি ঘটানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। পরিস্থিতি নিজেদের আরও অনুকূলে নিতে অভ্যুত্থানকারীরা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের সড়ক ও বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ চেষ্টা বানচাল করে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
সুদান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে খুজে বের করে গ্রেফতার করছে। ওমর আল বশিরের নেতৃত্বাধীন আগের সরকারের সাথে যুক্ত একাধিক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এর পেছনে ছিলেন বলে দাবি সুদান সরকারের।
দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত তাদের বাহিনীর সদস্যদের বেশিরভাগকেই আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ অফিসার রয়েছেন। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা যেসব সামরিক স্থাপনা দখল করে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল, সেনাবাহিনী আবারও সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।
অভ্যুত্থান তৎপরতা চলার সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেশাত্মবোধক গান প্রচার করা হতে থাকে এবং জনগণকে এই অভ্যুত্থান প্রতিহত করার আহবান জানানো হতে থাকে।
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই অভ্যুত্থান চেষ্টার কথা আগের দিন অর্থাৎ সোমবার বিকেলেই সরকার জেনে যায়।
সুদানের রাজধানী খার্তুমের পরিস্থিতি এই মূহুর্তে বেশ শান্ত ও স্বাভাবিক। শহরটির দুই অংশকে ভাগ করা নীলনদের ওপর থাকা একটি সেতু বন্ধ থাকা ছাড়া আর সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
অভ্যুত্থান পরিকল্পনা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, এর সাথে জড়িতরা সেনাবাহিনীর অস্ত্রের গুদাম, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন, সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনা নিজেদের কব্জায় নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এরপরই ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ঘোষণা দিয়ে নিজেদেরকে দেশের নতুন নেতৃত্ব হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল তারা।
তবে এসব তথ্য সরকার আগাম জেনে ফেলায় অভ্যুত্থানের উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়।
১৯৮৯ সাল থেকে বিভিন্ন পরিচয়ে একটানা ২০ বছর সুদান শাসন করা সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির কয়েক মাসের ব্যাপক গণবিক্ষোভ এবং তারপর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। তাকে এবং তার পুরো মন্ত্রীসভাকেই এরপর আটক করা হয়।
বশিরের পতনের পর সুদানে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এই সরকারে সামরিক ও বেসামরিক উভয় প্রতিনিধিত্বই রাখা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারই দেশটিতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করবে। তবে প্রেসিডেন্ট বশিরের আমল থেকে চলে আসা তীব্র রাজনৈতিক বিভক্তি এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থা সেই লক্ষ্য পূরণে বারবার বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে।
সম্প্রতি সুদানে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার সামরিক বাহিনীর সাথে উত্তেজনা চলছে আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ এর।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় মুদ্রার মান পড়ে যাওয়া, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মত আর্থিক সংকটগুলো। এছাড়া সর্বজনগ্রাহ্য নেতারও অভাব রয়েছে দেশটিতে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সাথে সাথে দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাবও গণতন্ত্রের পথে সুদানের যাত্রাকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্থ করে যাচ্ছে।