উত্তর কোরিয়া বলেছে, তারা সফলভাবে নতুন হাইপারসোনিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে। সোমবার হোয়াসং-৮ নামের মিসাইলটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চালানো হয় বলে জানিয়েছে দেশটি।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ বলেছে, এই মিসাইল দেশটির গৃহীত পাচ বছর মেয়াদী সামরিক উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় সংযুক্ত হতে থাকা নতুন অস্ত্রগুলোর শীর্ষ পাচের একটি।
মিসাইলটির সফল পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার আত্মরক্ষার ক্ষমতা সবদিক থেকে বৃদ্ধি পেল বলে দাবি করেছে কেসিএনএ।
দেশটি হোয়াসং-৮ মিসাইলকে ‘কৌশলগত অস্ত্র’ হিসেবে অভীহিত করেছে। সাধারণত পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম মিসাইলের ক্ষেত্রেই এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের সাথে চলমান দেশটির উত্তেজনাকে আজকের এই পরীক্ষা আরও প্রকট করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যে উত্তর কোরিয়া তাদের সমরাস্ত্র প্রযুক্তির সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে, এই মিসাইল পরীক্ষা তাও আরও একবার দৃশ্যমান করল।
চলতি মাসে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত মিসাইল পরীক্ষা চালালো উত্তর কোরিয়া। এর আগের পরীক্ষা দু’টোর মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল একেবারেই অভিনব। একটি ট্রেন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় মিসাইলটি। সচরাচর কোন স্থলযান কিংবা যুদ্ধজাহাজ কিংবা সাবমেরিন থেকে মিসাইল ছোড়া হয়ে থাকে।
হাইপারসোনিক মিসাইল কি?
প্রচলিত মিসাইলের অন্যতম অত্যাধুনিক সংস্করণ হল হাইপারসোনিক মিসাইল। এগুলো সাধারণ মিসাইলের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং সূক্ষ্মভাবে শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
আবার গতি এবং সূক্ষ্মতার কারণে প্রতিপক্ষের মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহজে সনাক্ত করতে পারেনা হাইপারসোনিক মিসাইলকে।
আজকের উৎক্ষেপিত হোয়াসং-৮ মিসাইলে জ্বালানি সংযোগের জন্য আম্পোল ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সাধারণ মিসাইল ব্যবস্থাপনায় মিসাইলটি উৎক্ষেপণের আগে গাড়িতে তেল নেওয়ার মত করে জ্বালানি ভরতে হয়। এতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়, যা অতি জরুরি উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে সময় অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আম্পোল ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি আগে থেকেই বিশেষ জারে রাখা থাকে। এই জারগুলোকেই বলা হয় আম্পোল। উৎক্ষেপণের সময় মিসাইলে আম্পোল ভরে নিলেই সেটি উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনায় আম্পোল ব্যবহারের সূচনাকে যুগান্তকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সংযোজনের কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে নিজেদের হাতে থাকা দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সক্রিয় করে শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাতে সক্ষম হবেন কিম জং উন।
চলতি বছর জানুয়ারিতে এক সভায় উত্তর কোরিও নেতা দাবি করেছিলেন যে তাদের বিজ্ঞানীরা হাইপারসোনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গবেষণা শেষ করে এনেছে।
আজকের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়ার দূত কিম সং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া এক ভাষণে নিজেদের অস্ত্র ভান্ডার উন্নত করার সব রকম অধিকার তাদের রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, উত্তর কোরিয়া তার নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য এবং দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ করছে।
প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে দীর্ঘ কয়েক দশকের উত্তেজনাময় সম্পর্কের কারণে উত্তর কোরিয়া প্রায়ই তাদের কঠোর ভাষায় হুমকি দিয়ে থাকে। যার প্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়াও নিজেদের সামরিক সক্ষমতা একটু একটু করে বাড়াচ্ছে। দেশটি সম্প্রতি তাদের প্রথম সাবমেরিন থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে।
আরেক প্রতিবেশী জাপান ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত কোরিয়ায় ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়েছিল। তাদের হাতে নিপীড়নের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে দক্ষিণের মত উত্তর কোরিয়ার সাথেও জাপানের সম্পর্ক শীতল। কিমের দেশের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তাই উদ্বিগ্ন জাপানও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ক্রমাগতভাবে উত্তর কোরিয়াকে তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। একই মনোভাব ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও। তবে এখন পর্যন্ত এসব চাপের কাছে নতিস্বীকারের কোন লক্ষণই দেখাচ্ছেনা কিম জং উনের উত্তর কোরিয়া।