জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন ফুমিও কিশিদা। দেশটির সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজেদের নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে ক্ষমতাসীন দল ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (এলডিপি)। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হওয়ার সুবাদে সংবিধান অনুযায়ী জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নিযুক্ত হবেন তিনি।
দেশটির সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় সরে দাড়ানোর পর দলের নতুন নেতা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় এলডিপি।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কিছুটা জোর করেই এবছর অনুষ্ঠিত টোকিও অলিম্পিকের আয়োজন করে জাপান সরকার। মহামারির মধ্যে ঝুকি নিয়ে এই গেমস আয়োজনের বিরোধিতা করেছিল জাপানের নাগরিকদের একটি বড় অংশ। তবে বিপুল আর্থিক ক্ষতি এড়ানোর কারণ দেখিয়ে অলিম্পিক আয়োজনের ব্যাপারে অনড় থাকেন প্রধানমন্ত্রী সুগা।
শেষ পর্যন্ত আয়োজনটি মোটামুটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলেও সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি ইয়োশিহিদে সুগা। জনপ্রিয়তা কমে যায় তার দল এলডিপি-রও। এমন অবস্থায় সবকিছুর দায় নিজের কাধে নিয়ে সরে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন সুগা।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর পদে সুগার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নির্ধারণের জন্য নিয়ম অনুযায়ী ভোটাভুটির উদ্যোগ নেয় এলডিপি। এতে চারজন প্রার্থীর ভেতর মূল প্রতিদ্বন্দিতা হয় জাপানের সাবেক দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং তারো কোনোর মধ্যে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মন্ত্রীসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা তারো কোনো বর্তমান মন্ত্রীসভারও সদস্য। অন্যদিকে ফুমিও কিশিদা সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ইয়াসুয়ো ফুকুদার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন।
দলীয় নির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে তারো কোনোকেই সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে টপকে দলীয় প্রধানের পদে বিজয়ী হন ফুমিও কিশিদা।
শিনজো আবের পদত্যাগের পর গত বছরের দলীয় নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন কিশিদা। কিন্তু পরাজিত হন ইয়োশিহিদে সুগার কাছে। প্রধানমন্ত্রী হন সুগা।
৬৪ বছর বয়সী ফুমিও কিশিদা জাপানের এক রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তার পিতা ও পিতামহ দু’জনেই জাপানের সংসদের সদস্য ছিলেন।
দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফুমিও কিশিদা। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা আণবিক বোমায় বিধ্বস্ত হিরোশিমার বর্তমান সাংসদ ফুমিও কিশিদা। বিশ্বের যেকোন প্রান্তে যেকোন প্রকার পারমাণবিক অস্ত্রের তাই ঘোর বিরোধী তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কিশিদার প্রচেষ্টাতেই ২০১৭ সালে হিরোশিমা সফর করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
দলীয় নির্বাচনে জয়ের পর আগামী ৪ অক্টোবর জাপানি সংসদে নিজের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে ফুমিও কিশিদাকে। কেবল তারপরই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের জন্য জাপানের সম্রাটের কাছ থেকে ডাক পাবেন তিনি।
সংসদে এলডিপি-র পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফুমিও কিশিদার নিয়োগ সহজেই অনুমোদন পেয়ে যাবে সেখানে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিশিদা দায়িত্ব পালন করবেন বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত। এরপর নতুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে দেশটিতে।
সমালোচকদের কাছে জননেতা হিসেবে ফুমিও কিশিদার ভাবমূর্তি ‘দূর্বল এবং অনাকর্ষণীয়’। তবে এলডিপি-র অভ্যন্তরে দলের ভবিষ্যৎ কান্ডারি হিসেবে তার যথেষ্ঠ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। দলের বর্ষীয়ান নেতাদেরও সমর্থন রয়েছে কিশিদার প্রতি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ফুমিও কিশিদার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখা।
এছাড়া উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিবেশী বলয়ে ভারসাম্যমূলক কূটনীতি বজায় রাখাও কিশিদার জন্য হবে আরেক চ্যালেঞ্জ। একদিকে ক্রমশ পরাক্রমশালী হতে থাকা চীন, অন্যদিকে অনিশ্চিত উত্তর কোরিয়ার মাঝে নিজেদের নিরাপদ কিন্তু সুদৃড় অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে ফুমিও কিশিদার সরকারকে।