তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাঈদ দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন নারীকে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিউনিশিয়া তো বটেই, গোটা আরব বিশ্ব প্রথমবারের মত কোন নারী প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে। নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নাজলা বোদেন রোমধানে পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।
তিউনিশিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রোমধানে এমন এক সময় দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন নানাবিধ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত তিউনিশিয়া।
২০১১ সালে এই তিউনিশিয়া থেকেই সূচনা হয়েছিল ঐতিহাসিক আরব বসন্তের। সেই আন্দোলনে পতন ঘটে দেশটির দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসক বেন আলির।
তবে তিউনিশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাইস সাঈদের বিরূদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তা কুক্ষিগত করার অভিযোগ উঠছে ক্রমাগত। আগের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বরখাস্ত করেছেন, সংসদ ভেঙে দিয়েছেন আর বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট তথা নিজের হাতে বিপুল নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত করেছেন।
গত সপ্তাহেও ৬৩ বছর বয়সী সাঈদ ঘোষণা করেন যে সংসদ না থাকায় তিনি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে থাকবেন।
আগের মন্ত্রীসভাকে অপসারণের পর থেকেই কাইস সাঈদের ওপর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ তীব্র হচ্ছিল দ্রুত নতুন সরকার নিয়োগ দেওয়ার জন্য। এই অবস্থায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাজলা বোদেন রোমধানের নাম ঘোষণা করে প্রেসিডেন্টের দপ্তর।
আজ প্রেসিডেন্ট সাঈদের সাথে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করেন নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী রোমধানে। এসময় প্রেসিডেন্ট তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন মন্ত্রীসভা গঠন করতে বলেন।
এই সাক্ষাৎের সময় প্রেসিডেন্ট সাঈদকে প্রধানমন্ত্রী পদে একজন নারীর নিয়োগ পাওয়াকে কয়েকবার ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে অভীহিত করতে শোনা যায়। তিনি বলেন, এই ঘটনা তিউনিশিয়ার জন্য সম্মানের এবং এটি তিউনিশিয়ার নারীদের প্রতি একপ্রকার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।
তিউনিশিয়ার প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন মন্ত্রীসভার বাকি সদস্যদেরকে। আর প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রীসভার নিয়োগকে অনুমোদন দেয় সংসদ।
তবে প্রেসিডেন্ট সাঈদ সংসদ ভেঙে দেওয়ায় নতুন সরকারকে আর কারও অনুমোদন নিতে হবেনা। সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে শপথ নিয়েই দায়িত্ব পালন করা শুরু করবে প্রধানমন্ত্রী রোমধানের নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রীসভা।
আরব বসন্তে বেন আলির বিদায়ের পর রোমধানে হতে যাচ্ছেন তিউনিশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্ব নিয়েই তাকে একাধিক গুরুতর সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।
একদিকে সীমাহীন দূর্নীতি ও অনিয়ম, অন্যদিকে বেকারত্ব, সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাতে চরম অব্যবস্থাপনার মত সংকটগুলোর যথাযথ সমাধানের উপায় খুজতে হবে তাকে।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এবং মাসের পর মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে তিউনিশিয়ার অর্থনীতিও এখন সংকটে। জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট সাঈদ দেশের নির্বাহী ক্ষমতার অনেকটা ‘দখল’ করে নিলে ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’ (আইএমএফ) শাস্তিস্বরূপ তিউনিশিয়ার সাথে তাদের আর্থিক কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। এতে অর্থনৈতিকভাবে আরও চাপে পড়ে দেশটি। কারণ আর্থিক সহায়তা ও ঋণের জন্য সংস্থাটির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল তিউনিশিয়া। এমন পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধারের পথ খোজাও নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য হবে আরেক চ্যালেঞ্জ।
সংসদ ভেঙে দেওয়া কিংবা সংসদ ও সরকারের বেশিরভাগ ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নিজের হাতে নিয়ে নেওয়াকে তিউনিশিয়ার বিরোধী দলগুলো ‘সাংবিধানিক ক্যু’ বললেও প্রচলিত রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ দেশটির জনগণের যথেষ্ঠ সমর্থন এখনও রয়েছে প্রেসিডেন্ট কাইস সাঈদের ওপর।
তবে তা আর কতদিন থাকবে সেটি অনেকাংশে নির্ভর করবে সাঈদের নিয়োগ দেওয়া তারই সমবয়সী আরব বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী কতটা সফলভাবে তিউনিশিয়ার চলমান সংকটগুলো মোকাবেলা করতে পারবেন তার ওপর।