ইকুয়েডরের কারাগারে ভয়ংকর এক দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৬ জন। কারাগারটিতে দুই প্রতিপক্ষ গ্রুপের মধ্যে এই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। ইকুয়েডরের ইতিহাসে কোন কারাগারে এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
আজকের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। কয়েকজনকে শিরচ্ছেদ করেছে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। গুয়ায়েকুইল শহরে সংঘটিত এই দাঙ্গার সময় বন্দিরা গ্রেনেডও ছোড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ কমিশনার।
সহিংসতার মাত্রা এবং ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪০০ পুলিশ অফিসারকে অভিযানে নামতে হয়।
ইকুয়েডরের গুয়ায়েকুইল শহরে অবস্থিত দ্য লিটোরাল পেনিটেনশিয়ারি নামের এই কারাগারটিতে আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সাথে জড়িত সাজাপ্রাপ্তদের রাখা হয়ে থাকে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, প্রতিবেশী মেক্সিকোর শক্তিশালী মাদক পাচার চক্র এই কারাগারের ভেতরে উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছিল।
গুয়ায়েকুইল কারাগারে দাঙ্গার ব্যাপারে ইকুয়েডরের কারা দপ্তরের প্রধান বলছিলেন, পরিস্থিতি ছিল মারাত্মক। গতকাল সারারাত ধরে কারাগারে গুলি চলেছে, বিস্ফোরণ ঘটেছে। আজ সকালে আমরা কারাগারের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সক্ষম হই। ভেতরে যে যে স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, আমরা সেসব স্থানে যত পৌছচ্ছি, ততই আরও বেশি মৃতদেহ দেখতে পাচ্ছি।
মঙ্গলবার রাতে এই কারাগারের এক অংশের বন্দিরা একটি গর্তের ভেতর দিয়ে অন্য অংশে পৌছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ওপর আক্রমণ শুরু করে। প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী পাল্টা হামলা করা শুরু করলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
দিনভর সহিংসতায় শতাধিক মৃত্যুর পাশাপাশি ৮০ জনের ওপর বন্দি আহত হয়। ঘটনার সময় কারাগারের ছয়জন রাধুনি ভেতরে আটকা পড়ে যায়। পরে পুলিশের সহায়তায় তাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুলেইরমো লাসো আজকের ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশটির কারাগারগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
ইকুয়েডরে বেশ কিছুদিন ধরেই একের পর এক উত্তেজনার ঘটনা ঘটছে কারাগারগুলোতে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি গড়াচ্ছে রক্তক্ষয়ী সহিংসতায়। গত ফেব্রুয়ারিতে এমনই আরেক সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৯ কারাবন্দি।
দ্য লিটোরাল পেনিটেনশিয়ারি কারাগারটিকে ইকুয়েডরের অন্যতম বিপদজনক কারাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই কারাগারে লোস কনেরোস নামের মাদক গোষ্ঠীর দন্ডপ্রাপ্ত সদস্যদের রাখা হয়। ধারণা করা হয়, প্রতিবেশী মেক্সিকোর প্রভাবশালী সিনালোয়া মাদক চক্রের সাথে যোগ রয়েছে ইকুয়েডরের স্থানীয় এই গোষ্ঠীটির।
মেক্সিকোর আরেক অপরাধী সংগঠন ‘দ্য জেলিসকো নিউ জেনারেশন কার্টেল’ (সিজেএনজি)-ও সম্প্রতি ইকুয়েডরের স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর সাথে জোটবদ্ধ হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, ইকুয়েডর থেকে মধ্য-আমেরিকা পর্যন্ত মাদক পাচারের রুটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিপক্ষ সিনালোয়ার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া।
প্রতিপক্ষ এসব চক্রের মাধ্যমে ইকুয়েডরে কারাগারের বাইরে এবং ভেতরে প্রতিদ্বন্দী বিভিন্ন গ্রুপের সৃষ্টি হচ্ছে। এরাই কিছুদিন পরপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে কারাগারগুলোতে।
স্থানের অপ্রতুলতাও ইকুয়েডরের কারা সমস্যার আরেক কারণ। দেশটির কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি বন্দি রয়েছে বলে গত জুলাইয়ে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গুলেইরমো লাসো। এই সংকট মোকাবেলায় যেসব বন্দি ছোটখাট অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত কিংবা যাদের সাজার মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট।