বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপের অর্ধেক জনগোষ্ঠী করোনা ভাইরাসের সাম্প্রতিক ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনে আক্রান্ত হতে চলেছে।
ভাইরাসটির এর আগের সবচেয়ে ভয়ংকর ধরন ডেল্টা যেভাবে বিশ্বের পূর্ব থেকে ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিমে তান্ডব চালিয়েছে, অমিক্রনের ক্ষেত্রে সেটি ঘটছে উল্টো। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হলেও এটি বড় আকারে সংক্রমণ ছড়ায় যুক্তরাষ্টে। ধীরে ধীরে এটি ইউরোপের দেশগুলোতে উদ্বেগজনক হারে সংক্রমিত হতে থাকে। পরবর্তীতে ভারতসহ পূর্বের দেশগুলোতে বড় মাত্রায় হানা দেয়।
নতুন বছর ২০২২ এর প্রথম সপ্তাহেই ইউরোপে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হন ৭০ লক্ষ মানুষ। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র দু’সপ্তাহেই দ্বিগুণ হয়েছে মহাদেশটিতে।
এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা আজ মন্তব্য করেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে পর্যুদস্ত যেসব দেশ ২০২১ সালের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি প্রায় সামলে উঠতে পেরেছিল, করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাত্রার কারণে তারা আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
সংস্থাটি জানায়, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ব্যাপক হারে অমিক্রন সংক্রমণের ঝুকি সবচেয়ে বেশি। দেশভেদে এটা নির্ভর করবে কোথায় জনবসতি কেমন, স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে, টিকাকরণের হার, টিকাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ, এলাকাগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রভৃতির ওপর।
অবশ্য সারাবিশ্বে অমিক্রন আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়লেও সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্তদের তুলনায় অনেকটাই কম হয়। এছাড়া মৃত্যু তো বটেই, আক্রান্তকে গুরুতর অসুস্থ করে ফেলার ক্ষমতাও ডেল্টার চেয়ে অমিক্রনের বেশ কম।
তারপরও বিজ্ঞানীরা এই ভ্যারিয়েন্টকে হালকাভাবে না নেওয়ার আহবান জানাচ্ছেন। কারণ কোভিড প্রতিরোধে বর্তমানে প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলো ডেল্টার ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও অমিক্রনের বেলায় ততটা হচ্ছেনা। এমনকি ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়া ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি দু’টো ডোজের পর বুস্টার ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদেরও অমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া ব্যাপক হারে অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডাক্তার, নার্সসহ বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীও দেশে দেশে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী এদেরকে স্বাস্থ্য কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পরিষেবা এখনই কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আক্রান্তের হার বর্তমানের মত হু হু করে বাড়তে থাকলে ভবিষ্যৎে অনেক দেশেরই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাছাড়া করোনার ডেল্টা ধরনের আপাত বিদায়ে কিছুটা স্বস্তি আসার মধ্যেই যেভাবে আরও সংক্রামক অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটেছে, তাতে অমিক্রনের পরের রূপটি যে এগুলোর চেয়েও বেশি সংক্রামক কিংবা প্রাণঘাতী হবেনা, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেনা। তাই মাস্ক পড়া, ভিড় এড়িয়ে চলা, ভ্যাকসিন দেওয়ার মত পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখতে দেশগুলোকে আহবান জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ব্রিটেনে সোমবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দেড় লক্ষের কাছাকাছি। পোল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ১০০,০০০ ছাড়িয়েছে। দেশটি এখন মৃত্যুহারের দিক থেকে বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। রাশিয়ার স্বাস্থ্যকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে তাদের দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১০০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে মার্কিন ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার জানিয়েছে তারা আগামী মার্চ নাগাদ তাদের ভ্যাকসিনের এমন সংস্করণ উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে যেটি করোনার অমিক্রন ধরন থেকেও টিকা গ্রহণকারীদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে। তবে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনও এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন মতামত দেননি।