করোনা বিধিনিষেধের মধ্যে নিজ দপ্তর ১০ ডাউনিং স্ট্রীটে সহকর্মীদের সাথে ‘পার্টি’ করে এখন গদি হারানোর শঙ্কায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত ব্রিটেনেও যখন তান্ডব চালাচ্ছিল কোভিড-১৯ সেসময়ের এক সন্ধ্যা রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছে জনসনকে।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সেসময় দেশব্যাপী নানা বিধিনিষেধ জারি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। যার মধ্যে ছিল অপ্রয়োজনে বহু মানুষের জমায়েত না হওয়া। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত চাঞ্চল্য ফেলে দেওয়া এক আলোকচিত্রে দেখা যায়, ১০ ডাউনিং স্ট্রীটের পেছনের চত্বরে প্রায় ডজন খানেক সহকর্মীর সাথে জড়ো হয়ে পানীয়র গ্লাস সামনে নিয়ে রীতিমত খোশমেজাজে আড্ডা দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
ঐদিনের পার্টিতে প্রায় ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সসেজ রোল, ক্রিস্পের মত হালকা খাবারের আয়োজন ছিল সেখানে। আর আমন্ত্রিতদের নিজেদের পানীয় সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল।
২০২০ সালের ২০ মে তারিখে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পাশের কোন ভবন থেকে তোলা এই ছবিটি নিয়ে বিরোধী লেবার পার্টি তো বটেই, খোদ নিজের দল কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতাদেরও তোপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী জনসন।
একে তো করোনার বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে কাজের প্রয়োজনে নয়, স্রেফ খোশগল্প করার উদ্দেশ্যে এতজনের উপস্থিতি, তার ওপর সেসময় প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর মিছিলের মধ্যে এভাবে পানীয় সহকারে আনন্দ করায় জনসনের নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং বিবেকবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ঘটনার তীব্রতার অভিঘাতে প্রধানমন্ত্রী সেদিনের আচরণের জন্য কোন অজুহাত না দেখিয়ে এর দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি সহকর্মীদের সাথে ডাউনিং স্ট্রীটের লনে পার্টি করাকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার তীব্র ধকল সামলানোর উদ্দেশ্যে সাময়িক বিশ্রাম ও হালকা বিনোদনের উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করলেও এর কারণে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় সংসদে দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে দেওয়া তার বক্তব্যে জানান, তিনি ঐদিনের জমায়েতটিতে ২৫ মিনিটের মত ছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতেও তীব্র চাপের মধ্যে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে যাওয়ায় তিনি সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলেন ঘরোয়া ঐ আয়োজনে।
বিরোধী দলনেতা লেবার পার্টির প্রধান স্যার কেইর স্টারমার অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও জনসনের সমালোচনা করে বলেছেন, যারা ফ্রন্টলাইনে (করোনাকালীন স্বাস্থ্যসহ জরুরি পরিষেবায় কর্মরত) জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করে গেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনাও তাদের জন্য যথেষ্ঠ নয়।
তবে উপ-প্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস, অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদসহ মন্ত্রীসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী জনসনের পাশে দাড়িয়েছেন। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ঐদিনের ঘটনার (বিধিনিষেধের মধ্যে পার্টি করা) জন্য এরই মধ্যে সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এরপরও তার পদত্যাগের দাবি করে যাওয়াটা অযৌক্তিক।
উল্লেখ্য, চাপের কাছে হার মেনে বরিস জনসনকে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হলে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাস এবং রিশি সুনাকের নামই সবচেয়ে জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে।
২০ মে’র পার্টি আয়োজন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জনসন তারই সরকারের জারি করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করেছেন কিনা তা তদন্তের জন্য একজন সিনিয়র আমলার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার পদত্যাগের জন্য বিরোধীদল এমনকি সরকারি দলের একাংশের দাবির প্রেক্ষিতে ঐ তদন্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সংসদে বলেন, আমি সদস্যদের অনুরোধ করব, কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যদিও নেহাৎই আমার সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে সেদিনের পার্টি আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তবে আমার মনে হচ্ছে অন্য কোনভাবেও আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে পারতাম।
ঐদিনের ঘটনা নিয়ে চলা তদন্তটির ফলাফল আগামী সপ্তাহেই জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।