প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গার সমুদ্রসীমায় সংঘটিত ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আশেপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
শনিবার সাগরের তলদেশে অবস্থিত আগ্নেয়গিরির প্রচন্ড শক্তিশালী উদগারণের পর চতুর্দিকে বিশাল তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ আকৃতির ঢেউগুলোর কারণে চারপাশের বহু দূরত্বের উপকূলগুলোতেও সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ এবং তার জেরে সৃষ্ট ঢেউয়ের মাত্রা এতই তীব্র ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানও তাদের নাগরিকদের উপকূলীয় এলাকা ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যাওয়ার নির্দেশনা জারি করে, যে দেশ দু’টো ভৌগোলিকভাবে টোঙ্গা উপকূল থেকে বহু দূরে অবস্থিত।
তবে টোঙ্গায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বা অগ্ন্যুৎপাত পরবর্তী প্রভাবের ব্যাপারে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।
টোঙ্গার প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিশাল ঢেউয়ের তোড়ে টোঙ্গার রাজধানী নুকুয়ালোফায় নৌকা, ট্রলারসহ বিপুল সংখ্যক নৌযান ভেসে গেছে।
তিনি আরও জানান, অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া বিপুল ভষ্মের পুরু স্তরে নুকুয়ালোফা ঢেকে গেছে। এর বাইরে রাজধানীর পরিস্থিতি আপাত শান্ত ও স্থিতিশীল রয়েছে।
দূর্যোগের কারণে দ্বীপরাষ্ট্রটির সাথে যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়ার কথা জানিয়ে জেসিন্ডা আর্ডেন জানিয়েছেন, টোঙ্গার ক্ষয়ক্ষতি নিরীক্ষা করার জন্য নিউজিল্যান্ড সেখানে বিমান পাঠাবে।
টোঙ্গায় এখনও পর্যন্ত কারও মৃত্যু বা আহত হওয়ার আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ সীমিত হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সুনির্দিষ্টভাবে জানতে আরও কিছুটা সময়ে লেগে যেতে পারে।
সেদিকে ইঙ্গিত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্থনি ব্লিংকেন বলেছেন, টোঙ্গায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে ওয়াশিংটন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং দেশটিকে সবরকম সবরকম সহায়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত।
শনিবার বিস্ফোরিত আগ্নেয়গিরিটির নাম হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’পাই। এটি রাজধানী নুকুয়ালোফা থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবে সৃষ্ট ১ মিটারের চেয়েও উচু ঢেউ দ্বীপটিতে তান্ডব চালায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টোঙ্গার নাগরিকদের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, দেশটির অধিবাসীরা দলে দলে নিচু এলাকা ছেড়ে নিরাপদ অঞ্চলে যাওয়ার চেষ্টার কারণে সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকাগুলোর বাড়ি, স্কুল, উপাসনালয় জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ভিডিওগুলোতে।
টোঙ্গার ভূতাত্ত্বিক দপ্তর জানিয়েছে, আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের সময় গ্যাস, ধোয়া ও ছাইয়ের কুন্ডুলি আকাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উচুতে উঠে যায়।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে এর আওয়াজ পুরো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে শোনা যায়। আট মিনিট ধরে চলা অগ্ন্যুৎপাতের শব্দ ৮০০ কিলোমিটার দূরের অপর দ্বীপরাষ্ট্র ফিজিতে বজ্রপাতের মত শোনাচ্ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
অগ্ন্যুৎপাতের পর সৃষ্ট জলতরঙ্গ জাপান উপকূল পর্যন্ত পৌছালে দেশটির কাগোশিমা প্রদেশের আমামি-ওশিমা জেলায় ১.২ মিটার উচু সুনামি রেকর্ড করা হয়।