ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রবল সম্ভাবনার মধ্যে দেশটিতে নিজেদের দূতাবাস থেকে কর্মীদের একাংশকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নিল যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জল্পনা আরও জোরালো হয়ে উঠল।
সাধারণত কোন দেশে যুদ্ধ বা তীব্র সংঘাতের সম্ভাবনা থাকলে অন্যান্য দেশ সেখানে থাকা নিজ দূতাবাসের কর্মীদেরকে নিরাপত্তার স্বার্থে ফিরিয়ে আনে। অতি জরুরি কর্মকান্ড চালানোর জন্য সীমিত সংখ্যক কর্মীকেই কেবল বহাল রাখা হয়। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়ে গেলে তাদেরকেও সরিয়ে নিয়ে দূতাবাস পুরোপুরি বন্ধও করে দেওয়া হয়।
ইউক্রেনের দূতাবাসে নিজেদের জনবল কমানোর মার্কিন ঘোষণায় তাই আন্দাজ করা যাচ্ছে, পরিস্থিতির আকস্মিক কোন উন্নতি না হলে দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণ একপ্রকার নিশ্চিত। এবং সম্ভবত তা ঘটতে চলেছে কয়েক দিনের মধ্যেই।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মার্কিন দূতাবাসের অতি-জরুরি কাজে যুক্ত নন এমন কর্মীদেরকে প্রত্যাহারের এই প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহ নাগাদই শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে কূটনৈতিক তৎপরতার সাথে সাথে যুক্তরাষ্টের প্রতিশ্রুত সীমিত সামরিক সহায়তা নিয়েও গত কয়েক সপ্তাহ ব্যস্ত সময় পার করেছে দূতাবাসটি।
ইউক্রেন আক্রমণের মুখে পড়লে মার্কিন প্রতিক্রিয়া সামরিক হবে নাকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কেবলই কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। জানা গেছে, ইউক্রেনকে রক্ষায় নিজেদের সেনা পাঠিয়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে একেবারেই আগ্রহী নয় হোয়াইট হাউজ।
তবে রুশ হামলার মুখে দীর্ঘদিনের মিত্র ইউক্রেনকে একা ফেলে আসতেও নারাজ প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেইমত তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ইউক্রেনের জন্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর।
সেই প্রতিশ্রুতি মত সবমিলিয়ে প্রায় দু’লক্ষ পাউন্ড ওজনের প্রাণঘাতী অস্ত্রের চালান এরই মধ্যে পৌছেছে ইউক্রেনে। আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদসহ এই সরঞ্জামগুলো সীমান্তে নিয়োজিত ইউক্রেনের সেনাদের কাছে পাঠানো হবে।
মার্কিন সমরাস্ত্রের এই চালান ইউক্রেনে আসার মাত্র দু’দিন আগে হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, আমার মনে হচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন দখল করবেনই। আর এতে করে ইউরোপে বহু বছর পর ফিরে আসতে চলেছে যুদ্ধ।
এদিকে অপর এক অগ্রগতিতে জানা গেছে, এসপ্তাহেই রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন, ফ্রান্স ও জার্মানির কূটনীতিকরা প্যারিসে একটি বৈঠক করতে চলেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্থনি ব্লিংকেন গত শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে সুইজারল্যান্ডে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। অবশ্য আলোচনার পর ব্লিংকেন মন্তব্য করেন, আমরা কোন অগ্রগতি অর্জনের প্রত্যাশা করিওনি আজকের বৈঠকে। তবে আমরা একে অন্যের উদ্বেগের বিষয়গুলো অনুধাবন করব।
অনুরূপ আরেক বৈঠকে মস্কোতে মিলিত হতে যাচ্ছেন ব্রিটেন ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সম্প্রতি সতর্ক করে বলা হয়েছিল যে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে মিত্রদের সাথে নিয়ে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে একের পর এক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউক্রেন সীমান্তে এরই মধ্যে প্রায় এক লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। একই সাথে ট্যাংকসহ বিপুল পরিমান সাজোয়া যানও জড়ো করেছে দেশটি। মস্কো যদিও বলছে তাদের নিয়মিত সামরিক মহড়ার উদ্দেশ্যে এই আয়োজন, তবে পশ্চিমা দেশগুলো একপ্রকার নিশ্চিত যে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে দেশটি দখল করে নিতে চলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের অন্তর্গত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এভাবেই সেনা অভিযান চালিয়ে দখল করে নিজেদের দেশের সাথে সংযুক্ত করে নিয়েছিল রাশিয়া। সেসময় অর্থনৈতিক অবরোধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল পুতিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তবে সেগুলোর কার্যকারিতা কতটুকু, তা ইউক্রেন সীমান্তে দেশটির এখনকার রণপ্রস্তুতি দেখে সহজেই বোঝা যায়।