পদত্যাগের জন্য চাপের মুখে থাকা শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাভায়া রাজাপাকসে নতুন মন্ত্রীসভার নিয়োগ দিয়েছেন। চলমান নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শ্রীলংকা। দেশটির জনগণ অর্থনীতির এই শোচনীয় অবস্থার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাভায়া, তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দাসহ গোটা রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করে আসছে।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শ্রীলংকার শাসনভার রয়েছে এই পরিবারটির হাতে। প্রথমে মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন কয়েক বছর। গোতাভায়া তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট না থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ২০১৯ সালে গোতাভায়াকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়ে নিজে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন মাহিন্দা। এই পুরো সময়ে সংসদের স্পিকার, অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীর পদে ছিলেন তাদের অন্য ভাইয়েরা। ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন মাহিন্দার ছেলে নামাল রাজাপাকসে।
বলা হয়, ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজাপাকসে পরিবারের অদূরদর্শিতা ও একের পর এক ভুল নীতির কারণেই ধীরে ধীরে ডুবতে বসে শ্রীলংকার একসময়ের সমৃদ্ধ অর্থনীতি। এর সাথে যুক্ত হয় ব্যাপক দূর্নীতি ও স্বজনপোষণ। এসবের জেরে অর্থনৈতিক সংকট এবছরের গোড়ায় ভয়াবহ আকার ধারণ করে। খ্যদ্য, ওষুধ, জ্বালানির মত অতিপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়ে দেশটির সাধারণ মানুষ। অতিষ্ঠ নাগরিকেরা একসময় পথে নেমে পদত্যাগ দাবি করেন প্রেসিডেন্টের।
শান্তিপূর্ণ সেই বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংস হয়ে ওঠে। তেমনই এক ঘটনায় ক’দিন আগে আক্রান্ত হয় প্রেসিডেন্ট গোতাভায়ার বাসভবনও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, কারফিউ জারি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মত পদক্ষেপ নেন গোতাভায়া। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেসব সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারও করে নিতে বাধ্য হন তিনি।
জনরোষ প্রশমিত করার শেষ চেষ্টা হিসেবে গত সপ্তাহে পুরো মন্ত্রীসভাই ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। তবে স্বপদে বহাল রাখেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে। তিনি ছাড়া মন্ত্রীসভার বাকি সব সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন গোতাভায়ার কাছে।
প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন সকল দলকে নিয়ে নতুন জাতীয় সরকার গড়ার। তিনি বিরোধী দলগুলোকে এই সরকারে যোগ দেওয়ার আহবান জানায়। তবে আন্দোলনরত বিরোধীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা ঐ সরকারে অংশ নেবেনা।
ফলে আজ তাদের ছাড়াই ২১ সদস্যের নতুন সরকার গঠন করেন প্রেসিডেন্ট গোতাভায়া রাজাপাকসে। মন্ত্রীসভার বেশিরভাগ সদস্যই ক্ষমতাসীন দলের। এর বাইরে কম গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দলেরও প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়েছে সরকারে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, রাজাপাকসে পরিবারের কোন সদস্যকেই স্থান দেওয়া হয়নি নতুন এই সরকারে। অর্থাৎ শ্রীলংকার ক্ষমতার কেন্দ্রে রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা অর্ধডজন থেকে এখন নেমে এল দুইয়ে। কেবল প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যাচ্ছেন দুই রাজাপাকসে।