রাজনীতিতে আবারো ফিরতে চলেছেন ব্রাজিলের জনপ্রিয় সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। এবছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ৭৬ বছর বয়সী এই নেতা।
আজ দলীয় এক সমাবেশে বক্তব্য রাখার মধ্যে দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন লুলা। সমাবেশে দেওয়া ভাষণে ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারোর হাত থেকে দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তাকে সমর্থন দিতে সবার প্রতি আহবান জানান লুলা।
২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বামপন্থী নেতা লুলা ডি সিলভা। তার সরকারের নেওয়া নানা জনমুখী প্রকল্পের কারণে সেসময় দেশটির লক্ষ লক্ষ নাগরিক দারিদ্র থেকে উঠে আসতে পেরেছিল। আর এমন সব পদক্ষেপই লুলাকে ব্রাজিলের আধুনিককালের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টে পরিণত করে।
লুলার পরে তারই সহকর্মী আরেক বামপন্থী নেত্রী দিলমা রোসেফ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনিও লুলা ডি সিলভার গণমুখী নীতি অব্যাহত রাখেন।
২০১৮ সালে একটি দূর্নীতির মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১২ বছরের কারাদন্ড পান লুলা ডি সিলভা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্যও ঘোষণা করা হয় তাকে। এতে আপাত অবসান ঘটে লুলার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের। তবে গতবছর তার সেই শাস্তির রায় বাতিল করে দেয় ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট। আগের রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে অভীহিত করে সর্বোচ্চ আদালত। কারাগার থেকে মুক্তি পান লুলা।
এর মধ্যে ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক জায়ার বোলসোনারো।
দরিদ্রবান্ধব লুলার সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবমূর্তির বোলসোনারো দেশটির ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতায় এসে চলমান অনেক সামাজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্প বন্ধ করে দেন তিনি। কর বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন বোলসোনারো।
এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের সার্বিক পরিস্থিতি ‘তার সময়ে ফিরিয়ে আনতে’ আবারো রাজনীতির মাঠে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন লুলা ডি সিলভা। ঘোষণা দেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করার।
অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য ঐ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে আগস্ট থেকে। তার আগে লুলার পক্ষে আজ এক অনানুষ্ঠানিক প্রচার সভার আয়োজন করা হয় ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে।
এই সমাবেশ থেকে দল, মত, শ্রেণি, ধর্ম, রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকদের ‘গণতান্ত্রিক শক্তির’ পক্ষে যোগ দেওয়ার আহবান জানানো হয়।
লুলা ডি সিলভা তার ভাষণে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিই আমাদেরকে সব মতপার্থক্য ভুলে অযোগ্য ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি আবার লড়াইয়ে ফিরছি!
লুলা ডি সিলভার আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো এবছরের শুরুতে মন্তব্য করেছিলেন, এটা অনেকটা একজন অপরাধীর অপরাধস্থলে ফিরে আসার মত ব্যাপার হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে লুলা ডি সিলভা জয়ী হয়ে গেলেও সহজে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাইবেননা বর্তমান প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো। তিনি বহুদিন ধরেই ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থার সমালোচনা করে আসছেন। আসন্ন নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি এই ব্যবস্থাকে দায়ী করে পুননির্বাচনের দাবি তুলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
লুলা ডি সিলভা তার নির্বাচনী যাত্রায় রানিংমেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাও পাওলোর গভর্নর গেরাল্ডো আকমিনকে। অর্থাৎ অক্টোবরে লুলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে গেরাল্ডো হবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট। বামপন্থী হলেও গেরাল্ডোর রয়েছে সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তি। ফলে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের কার্যকলাপে বিক্ষুব্ধদের তো বটেই, যারা লুলা ডি সিলভার উদার নীতিরও সমর্থক নন, তাদের ভোটও গেরাল্ডো টানতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লুলার ডি সিলভার বিরুদ্ধেই প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলেন গেরাল্ডো। তবে এবার বোলসোনারোর বিরুদ্ধে লুলার সাথে হাত মিলিয়েছেন তিনি। আজকের সভায় তার ওপর আস্থা রাখার জন্য লুলাকে ধন্যবাদ জানান গেরাল্ডো আকমিন।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জায়ার বোলসোনারোর চেয়ে বেশ ভালো ব্যবধানে এগিয়ে আছেন লুলা। তবে নির্বাচনের এখনও কয়েক মাস বাকি। ততদিন এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারলে তবেই আবারও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ফিরতে পারবেন লুলা ডি সিলভা।