অদ্ভূত এক নির্বাচনী ব্যবস্থায় জিতে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেন দেশটির সাবেক নেতা হাসান শেখ মোহাম্মদ। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে আজ অনুষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমী এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
জঙ্গি হামলাসহ নানামুখী নিরাপত্তা ঝুকির কথা বিবেচনা করে অন্যান্য রাষ্ট্রের মত সারা দেশ জুড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে একমত হয়েছিল সোমালিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো। এর পরিবর্তে কেবল দেশটির সংসদের ৩২৮ জন সদস্যকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আজ অনুষ্ঠিত হয় অস্বাভাবিক সেই ব্যবস্থার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে ভোটদানে বিরত থাকা একজন বাদে মোট ৩২৭ জন সাংসদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। তাদের মধ্যে ৩ সাংসদ তাদের ব্যালট পেপারই নষ্ট করে ফেলেন।
অবশিষ্ট সাংসদদের মধ্যে ২১৪ জনের ভোট পেয়ে সোমালিয়ার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন হাসান শেখ মাহমুদ। তিনি পরাজিত করেন ১১০ ভোট পাওয়া বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহামেদ আবদুল্লাহি ফারমাজোকে, যিনি ২০১৭ সাল থেকে দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন।
অভূতপূর্ব এই নির্বাচনী ব্যবস্থা একদিকে সোমালিয়ার নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, অন্যদিকে দেশটির দূর্বল গণতান্ত্রিক পরিবেশেরই প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সোমালিয়ার আজকের নির্বাচনটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৫ মাস আগে। সেসময়ই ৪ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছিল ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ফারমাজোর। কিন্তু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য এবং দেশজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নাশকতার আশংকায় তা পিছিয়ে যায়। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন ফারমোজা।
পরবর্তীতে দলগুলো সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ না করার। এর পরিবর্তে কেবল সংসদ সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার ব্যাপারে একমত হয় তারা। অবশ্য সোমালিয়ার এই সাংসদরাও সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন, তারা দেশটির বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর মনোনীতদের দ্বারা নির্বাচিত।
নিরাপত্তা নিয়ে ঝুকির কারণে আজকের ভোটগ্রহণ আয়োজন করা হয় রাজধানী মোগাদিসুর একটি সামরিক ঘাটির বিমান হ্যাঙ্গারে। পুরো ভোটপ্রক্রিয়া চলার সময় ঐ ঘাটিকে কার্যত এক দূর্ভেদ্য দূর্গে পরিণত করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলে।
ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদকে শপথ পড়ানো হয়। এসময় বাইরে তার সমর্থকেরা চিৎকার করে, ফাকা গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করে।
হাসান শেখ মোহাম্মদ পরবর্তী ৪ বছরের জন্য সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি এর আগে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্তও দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসানকে ক্ষমতায় গিয়ে মোকাবেলা করবে গুরুতর কিছু চ্যালেঞ্জ। সোমালিয়ায় চলমান অনাবৃষ্টির জেরে দেশটির প্রায় ৩৫ লক্ষ নাগরিক সামনের দিনগুলোতে তীব্র দূর্ভিক্ষের কবলে পড়ার ঝুকিতে রয়েছেন বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ।
তবে প্রেসিডেন্ট হাসানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসবে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘আল শাবাব’ এর তৎপরতা। আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন ‘আল কায়েদার’ সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এই গোষ্ঠীটি সোমালিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা কব্জা করে রেখেছে। সংগঠনটি প্রায়ই রাজধানী মোগাদিসুসহ সোমালিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
আল শাবাবকে দমনের জন্য জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাথে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে সোমালিও সরকার।
আর এতসব সংকটের সাথে দেশটিতে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে শুরু হওয়া খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। ফলে যতটা অস্বাভাবিক নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলেন হাসান, ততটাই অস্বাভাবিক নেতৃত্বগুণ তাকে দেখাতে হবে সোমালিয়ায় নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।