ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তার দেশের ২০ শতাংশ ভূখন্ড এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর ১০০ দিন পূরণের ঠিক আগে এই তথ্য দিলেন জেলেনস্কি।
আজ লুক্সেমবার্গের সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যোগ দেন ভোলোদিমির জেলেনস্কি। দেশটির সাংসদদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি জানান, মস্কো এখন রুশ বাহিনীর যুদ্ধ কেন্দ্রিক প্রায় সব ইউনিটকেই আগ্রাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছে। রুশ সেনাদের সাথে ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধের এলাকার আয়তন এরই মধ্যে ১,০০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস প্রদেশের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পশ্চিমা গোয়েন্দারা জানাচ্ছে, ভারী গোলাবর্ষণের সাহায্য নিয়ে শহরটির সিংহভাগ এলাকাই দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়ার সেনারা।
তবে এখনও পর্যন্ত সেভেরোদোনেৎস্কর পতন হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন শহরটির মেয়র সেরহি হাইদাই। তিনি জানাচ্ছেন, সেভেরোদোনেৎস্কর প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভাঙার জন্য শহরটির সবদিক থেকে হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের যোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে বেশ কিছু সড়ক থেকে রুশদের পিছু হটিয়ে দিয়েছে বলে জানান মেয়র। রাশিয়ার বেশ কিছু সেনাকে বন্দি করারও দাবি করেন তিনি। এছাড়া দু’পক্ষের প্রবল সংঘর্ষের কারণে সেভেরোদোনেৎস্ক শহর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া ব্যাহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মেয়র সেরহি।
জানা গেছে, সেভেরোদোনেৎস্কর প্রায় ১৫,০০০ বাসিন্দা শহরটিতে আটকা পড়ে আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আজত রাসায়নিক কারখানায় আশ্রয় নিয়েছেন। সম্প্রতি রুশ নিয়ন্ত্রণে যাওয়া মারিওপোলের আলোচিত আজভস্টল ইস্পাত কারখানার মত এই কারখানাটিও আয়তনে বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
এদিকে মারিওপোলের মেয়র আজ এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে জানিয়েছেন, দখলদার রুশ বাহিনীর বসানো নতুন নগর কর্তৃপক্ষের সাথে অসহযোগিতার দায়ে বেশ কয়েকজন বেসামরিক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে রাশিয়ার সেনারা। শহরটির পতনের ঠিক আগ মূহুর্তে নিরাপদে সরিয়ে আনা মেয়র ভাদইয়াম বয়চেঙ্কো দাবি করেছেন, ওলেনিভকা কারাগারে মারিওপোলের বহু নাগরিককে বন্দি করে রাখা হয়েছে। রুশ নিরাপত্তা বাহিনী স্থানীয় লোকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অসমর্থিত সূত্রের তথ্যমতে, মারিওপোলে গত তিন মাসে চালানো রুশ বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযানে কমপক্ষে ২২,০০০ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে দেশটির বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের, বিশেষ করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠদের ওপর নতুন একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ষষ্ঠ দফার অর্থনৈতিক অবরোধ চূড়ান্ত করেছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম, রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে স্বল্প মাত্রার নিষেধাজ্ঞা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহেই ইউক্রেনকে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এধরনের মিসাইল সরবরাহের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছিল। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে, এই আশংকায় পশিমারা এতদিন দেশটিকে এধরনের ভারী সমরাস্ত্র দেওয়া থেকে বিরত ছিল। তবে এখন অবস্থান বদলে কিয়েভের হাতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দিতে রাজি হয়েছে তারা। তবে রুশ ভূখন্ডে আঘাত হানতে পারে, এমন মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হবেনা বলেও জানিয়েছে পশ্চিমারা।
ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের নতুন করে অস্ত্র সহায়তার ঘোষণার প্রেক্ষিতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ এক বিবৃতিতে এমন পদক্ষেপকে ‘আগুনে তেল দেওয়ার’ সাথে তুলনা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এমন সব সিদ্ধান্ত যুদ্ধকে আরও প্রলম্বিত করে তুলবে।