কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন দেশটির সাবেক কমিউনিস্ট গেরিলা যোদ্ধা গুস্তাভো পেত্রো। আর এর মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মত কোন বামপন্থী নেতাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেতে যাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া।
নির্বাচনে দেশটির রাজধানী বোগোতার সাবেক মেয়র গুস্তাভো পেত্রো পরাজিত করেন ডানপন্থী ধনকুবের রোডোলফো হার্নান্ডেজকে। প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থীই অর্ধেকের বেশি ভোট না পাওয়ায় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দুই প্রার্থী গুস্তাভো এবং রোডলফোর মধ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রবিবার।
এতে মোট ভোটের ৫০.৫ শতাংশ পেয়ে কলম্বিয়ার ৩৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন গুস্তাভো পেত্রো। প্রতিদ্বন্দী রোডোলফো হার্নান্ডেজের চেয়ে প্রায় ৭০০,০০০ ভোট বেশি পান তিনি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই ফলাফল কলম্বিয়ার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। দেশটির দীর্ঘকালের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কেবল রক্ষণশীল কিংবা মধ্যপন্থীরাই।
কলম্বিয়ায় গত কয়েক বছর ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। জীবনযাত্রার মান ও দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ জনগণ পথে নেমে আন্দোলন করে আসছে। গত বছর সরকার-বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে প্রায় কয়েক ডজন নাগরিকের মৃত্যু হয় কলম্বিয়ায়।
এমন প্রেক্ষাপটে বামপন্থী গুস্তাভো পেত্রোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সরকারের কাছ থেকে জনবান্ধব নীতির প্রত্যাশা করছে কলম্বিয়ার সাধারণ মানুষ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুস্তাভো পেত্রোর রানিংমেট ছিলেন ৪০ বছর বয়সী ফ্রান্সিয়া মারকেজ। যিনিও আরেক ইতিহাস গড়ে হতে যাচ্ছেন কলম্বিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পরাজয় মেনে নিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী রোডোলফো হার্নান্ডেজ। সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, আমি আশা করব গুস্তাভো সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করবেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
কলম্বিয়ার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইভান ডুক, যিনি আর মেয়াদ না থাকায় এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি, টেলিফোনে নতুন প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তার সাথে সাক্ষাৎ এর আহবান জানিয়েছেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ৮০’র দশকে তৎকালীন সামরিক সরকারবিরোধী বামপন্থী সশস্ত্র গেরিলা গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে একসময় জেলও খেটেছেন গুস্তাভো।
পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। কলম্বিয়ার সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দু’টোরই সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন গুস্তাভো। দায়িত্ব পালন করেছেন রাজধানী বোগোতার মেয়র হিসেবেও।
২০১০ এবং ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন গুস্তাভো পেত্রো। তবে জয়ী হতে পারেননি। প্রথমবার চতুর্থ স্থানে এবং পরেরবার দ্বিতীয় স্থানে শেষ হয় তার নির্বাচনী যাত্রা।