বরিস জনসনের বিদায়ের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল ব্রিটেন। মার্গারেট থ্যাচার ও থেরেসা মে’র পর দেশটির ইতিহাসের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ ডাউনিং স্ট্রীটে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন লিজ ট্রাস।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির তৃণমূল স্তরের নিবন্ধিত সদস্যরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য ভোটদান করেন। বরিস জনসনের পদত্যাগের পরপরই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন প্রার্থী থাকলেও চূড়ান্ত ধাপগুলোতে প্রতিদ্বন্দীতায় টিকে থাকেন বরিস মন্ত্রীসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য লিজ ট্রাস ও ঋষি সুনাক।
অবশেষে আজ ঘোষণা করা হয় সারাদেশের কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটদানের চূড়ান্ত ফলাফল। জনমত জরিপগুলোতে লিজ ট্রাসের নিশ্চিত বিজয়ের ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল, তাই আজ সবার নজর ছিল কত ব্যবধানে তিনি ঋষি সুনাককে পরাজিত করতে পারেন সেদিকে।
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে প্রায় ২১ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। সুনাক পেয়েছেন ৬০,৩৯৯ ভোট আর বিজয়ী ট্রাস পেয়েছেন ৮১,৩২৬। শতাংশের হিসেবে লিজ ট্রাস ভোটদান করা কনজারভেটিভ সদস্যদের ৫৭.৪ শতাংশ ও ঋষি সুনাক ৪২.৬ শতাংশের সমর্থন লাভ করেছেন।
ফল ঘোষণার পর কনজারভাটিভ পার্টির উপস্থিত কয়েকশো সদস্যের সামনে দেওয়া পাচ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লিজ ট্রাস কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জানান সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে। তিনি বলেন, বরিস তুমি ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করেছ, বিরোধী লেবার পার্টিকে (নির্বাচনে) পরাস্ত করেছ, করোনাকালে দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দিয়েছ আর ভ্লাদিমির পুতিনের মুখোমুখি দাড়িয়েছ। ইউক্রেন থেকে ব্রিটেন, তুমি সকলের কাছে সমাদৃত।
লিজ ট্রাস ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে বরিস জনসনের অনুগত হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এই আনুগত্যই তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হতে সাহায্য করেছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে অংশ নেওয়া কনজারভেটিভ পার্টির তৃণমূল সদস্যদের মধ্যে বরিস জনসন ভীষণভাবে জনপ্রিয়।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশ ভালোভাবেই দেশ পরিচালনা করছিলেন বরিস জনসন। ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন, দক্ষ ও সক্রিয়ভাবে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা, অর্থনীতি মোটের ওপর নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধে দৃড়ভাবে কিয়েভের পাশে দাঁড়ানো.. সব মিলিয়ে ব্রিটেনের নেতা হিসেবে যথেষ্ঠ সাফল্যেরই পরিচয় দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস।
কিন্তু করোনাকালে জমায়েতের ওপর নিজেরই জারি করা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ১০ ডাউন স্ট্রীটে সহকর্মীদের সাথে জড়ো হয়ে রীতিমত পার্টি করে সমালোচনার মুখে পড়েন বরিস জনসন। নৈতিক দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি হলেও একটা সময় পর্যন্ত পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানান জনসন।
তবে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন তিনি। এরপরই শুরু হয় নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী খোঁজার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া।
ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী, কোন সরকারের মেয়াদ পূরণের আগেই প্রধানমন্ত্রী বিদায় নিলে ক্ষমতাসীন দলেরই অন্য কেউ তার জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন বাকি সময়টুকু পর্যন্ত। তারপর অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন।
সেইমত লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলাবেন বরিস জনসনের অবশিষ্ট মেয়াদ, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, দু’জনেই আগামীকাল বালমোরাল প্রাসাদে রাণী এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বরিস রাণীর হাতে তুলে দেবেন নিজের পদত্যাগপত্র আর রাণীর কাছ থেকে লিজ গ্রহণ করবেন নতুন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ।
এই আনুষ্ঠানিকতা সবসময় বাকিংহাম প্রাসাদে সম্পন্ন হয়ে এলেও স্বাস্থ্যগত কারণে এবার রাণী অবস্থান করছেন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে।
উল্লেখ্য, লিজ ট্রাস হতে যাচ্ছেন ৯৬ বছর বয়সী রাণী এলিজাবেথের সাত দশকের শাসনকালের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী।