গত মাসে অনুষ্ঠিত নেপালের সংসদ নির্বাচনের এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে কোন দল বা জোটেরই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে গঠিত কোন জোট সরকারের হাতেই আগামী পাঁচ বছরের শাসনভার ন্যস্ত হতে যাচ্ছে হিমালয়ের পাদদেশের ছোট্ট এই দেশটিতে।
২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নেপালি সংসদের ২৭৫ টি আসনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির কমিউনিস্ট পার্টি এককভাবে সর্বোচ্চ ৯৪ টি আসনে জয়লাভ করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার ক্ষমতাসীন দল নেপালি কংগ্রেস পেয়েছে ৬৩ আসন।
ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচন্ডের মাওয়িস্ট সেন্টার ৪৯ টি আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। নতুন গঠিত দল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি (আরএসপি) অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করে চতুর্থ স্থান লাভ করেছে। প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই তারা জিতে নিয়েছে ২১ টি আসন।
সরকার গঠনের জন্য সংসদের ২৭৫ আসনের মধ্যে কোনো দল বা জোটের দখলে কমপক্ষে ১৩৮ টি আসন থাকতে হয়।
এবারের নির্বাচনে কোন জোটই সেই সংখ্যক আসন জিততে পারেনি। ফলে কমিউনিস্ট পার্টি কিংবা নেপালি কংগ্রেসকে সরকার গড়ার জন্য মাওয়িস্ট সেন্টার, আরএসপি-সহ ছোট দলগুলো এবং স্বতন্ত্র সাংসদদের সমর্থন নিতে হবে। অর্থাৎ কম স্থিতিশীল ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকেই যাচ্ছে এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে থাকা নেপাল।
নির্বাচনের ফলাফল মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো এখন সরকার গড়ার জন্য নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যও আগেভাগে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে দলগুলো।
ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ছাড়াও বর্ষীয়ান নেতা রাম চরণ পৌদেল ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা গগন কুমার থাপার নাম শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল নেপালি কমিউনিস্ট পার্টিতে এ পদের জন্য কে পি শর্মা ওলি ছাড়া আর কোনো প্রতিদ্বন্দী নেই।
বিরোধী নেতা ওলি এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক পুষ্প কমল দহল প্রচন্ডকে টেলিফোন করে জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ওলি এবং প্রচন্ড উভয়েই কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতা। অতীতে একই দলে থাকলেও পরবর্তীতে তারা আলাদা হয়ে যান।
তবে এখনও তাদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকায় প্রচন্ডের দলের সাথে ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেসেরও জোট সরকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ওলির কমিউনিস্ট পার্টিকে আবারও বিরোধী দলের আসনে বসতে হতে পারে।